দেশের খবর: আওয়ামী লীগের তৃণমূলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে আগামী মাস থেকে। আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। এ ব্যাপারে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ২৪ অক্টোবর তিনি প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন। চিঠিতে জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গড়া নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের পদায়নের বিষয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। তবে সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সম্মেলন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের পাশাপাশি নানা কারণে বিতর্কিত এবং অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। দু’জনকেই সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।এ ছাড়াও আওয়ামী যুবলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়ে গেছে বলেই দলের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জাতীয় সম্মেলন হবে। পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারাই ওই সব সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন। বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের কোনো জায়গা হবে না।
নেতারা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান এখনও শুরু হয়নি। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। ওই সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড সম্মেলন হবে। এ জন্য ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যসব জেলার দিনক্ষণও দ্রুতই ঠিক করা হবে। আর এ সম্মেলন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়া হবে।
বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। গত শনিবার ফেনীর মধ্য দিয়ে জেলা পর্যায়ের সম্মেলন কার্যক্রম শুরু করেছেন ওবায়দুল কাদের। তৃণমূলের সম্মেলন কার্যক্রমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; আট সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ অ্যাডভোকেট, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
খুলনা বিভাগ: খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই খুলনা মহানগর, খুলনা জেলা ও কুষ্টিয়া জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দ্রুতই নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হবে। এই বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা ও সাতক্ষীরায় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ সব জেলার মেয়াদ এখনও রয়েছে।
সিলেট বিভাগ: সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, উপজেলা পর্যায়ে জোরেশোরে সম্মেলন হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলাগুলোর সম্মেলন আগে করা হচ্ছে। তিনি জানান, সব উপজেলার সম্মেলনের পর সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার সম্মেলন হবে। মেয়াদ থাকায় মৌলভীবাজারের সম্মেলন হবে না। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর এই জেলার সম্মেলন হয়েছে।
সিলেট বিভাগের আওতাধীন পাঁচটি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সিলেট মহানগর ও সিলেট জেলার সম্মেলনের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। আগামী ৩০ নভেম্বর সিলেট মহানগর এবং ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ফেনী থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের সম্মেলন। গত শনিবার এই সম্মেলনে সভাপতি পদে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক পদে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।
এই বিভাগের ১৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চারটির সম্মেলনের তারিখ গতকাল রোববার চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। তিনি বলেছেন, আগামী ২৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ি, ২৫ নভেম্বর রাঙামাটি, ২৬ নভেম্বর বান্দরবান এবং ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সম্মেলন হবে। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বর্ধিত সভায় চট্টগ্রাম মহানগরের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের প্রস্তুতি রয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বিভাগের আওতাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা মহানগর, কুমিল্লা উত্তর, কুমিল্লা দক্ষিণ, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার সম্মেলনের তারিখ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী বলেছেন, তারা সম্মেলনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিন বছরের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কক্সবাজার জেলার সম্মেলন হচ্ছে না। ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই জেলার সম্মেলন হয়েছিল। তবে কমিটির অনুমোদন হয়েছিল এর অনেক পরে। তাই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর কক্সবাজার জেলার সম্মেলন করা হবে।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ: রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ৭ নভেম্বর পঞ্চগড়, ২৬ নভেম্বর রংপুর, ২৮ নভেম্বর রংপুর মহানগর, ৭ ডিসেম্বর বগুড়া, ৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম, ১৯ ডিসেম্বর লালমনিরহাট এবং ২৭ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলার সম্মেলনের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। রংপুর বিভাগের আওতাধীন ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী জেলার তারিখ খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দিনাজপুর ও গাইবান্ধা জেলার সম্মেলনের সম্ভাবনা কম।
ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন নেত্রকোনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি বলে এই জেলায় সম্মেলন হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার সম্মেলন হয়েছিল।
জামালপুর জেলার সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০১৫ সালের ২০ মে এই জেলার সম্মেলন হলেও কমিটির অনুমোদন হয়েছে অনেক পরে। জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেছেন, এই জেলার সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কেন্দ্র চাইলে তারা সম্মেলন করবেন।
শেরপুর জেলা সভাপতি আতিউর রহমান আতিক বলেছেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে শেরপুর জেলার সম্মেলন হবে না। জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন পাল জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ১৯ মে শেরপুর জেলার সম্মেলন হয়েছিল।
ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলার সম্মেলন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মহানগর সভাপতি এহতেশামুল আলম। মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত বলেছেন, ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল এই দুই সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন হয়েছিল।
ঢাকা বিভাগ: ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না।
ঢাকা বিভাগের আওতাধীন ১৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর জেলা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, নারায়ণগঞ্জ জেলা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সম্মেলনের দিনক্ষণ দ্রুতই নির্ধারণ করা হবে।
বরিশাল বিভাগ: ঝালকাঠি ও ভোলা ছাড়া বরিশাল বিভাগের আওতাধীন পাঁচ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর বরগুনা, ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী, ৩ ডিসেম্বর পিরোজপুর, ৭ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগর এবং ৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র: সমকাল