শ্যামনগর

হত্যা মামলায় শ্যামনগরে আওয়ামী লীগ নেতা অসীম মৃধা গ্রেপ্তার

By daily satkhira

November 02, 2019

নিজস্ব প্রতিনিধি : দৈনিক সংবাদের মাালিকানাধীন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনকুড়ির “ঢাকা ঘেরের” ম্যানেজার পশুপতি বরকন্দাজ হত্যা মামলার পলাতক আসামী আওয়ামী লীগ নেতা অসীম কুমার মৃধাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের কুলতলি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম সূর্যকান্ত মৃধা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কয়েকবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান। শ্যামনগরের যতীন্দ্রনগর গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা বিজলী বরকন্দাজ বলেন, তার বাবা পশুপতি বরকন্দাজ দৈনিক সংবাদ এর মালিকানাধীন চুনকুড়ি বিলের ঢাকা মৎস্য ঘেরের দীর্ঘ ২২ বছরের ম্যানেজার ছিলেন। সর্বশেষ পাঁচ বছর লীজ দেওয়ার পর তিন বছর পেরিয়ে গেলে কয়েকজন জমির মালিক তাদের লীজ দেওয়া জমি চুনকুড়ি গ্রামের অরবিন্দ মণ্ডলসহ কয়েকজনের কাছে বার্ষিক বেশি টাকার লীজে ইজারা দেন। এ নিয়ে অরবিন্দ মণ্ডল ও তার সহযোগিরা ঢাকা ঘের দখলের চেষ্টা শুরু করে। এ ছাড়া তার বাবার সঙ্গে ২২ বিঘা জমি নিয়ে অরবিন্দ মণ্ডলের দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলে আসছিল। এসবেরই একপর্যায়ে ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে অরবিন্দ মণ্ডলের নেতৃত্বে অবিনাশ মণ্ডল, বিষ্ণুপদ মণ্ডল, আলমগীর , রফিক, বুলবুলি, সুন্দরবনের বনদস্যু ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতজেলিয়া গ্রামের সুকুমার মণ্ডলসহ ৫০ জনেরও বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘেরের বাসায় হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে বাসা থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে । খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। একপর্যায়ে শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক মুজাহিদুর রহমানের সহায়তার দুপুর দু’ টোর দিকে বাবাকে একটি এ্যম্বুলেন্সে করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথে আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালিন মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হরিনগর স্লুইজ গেটের সামনে এ্যম্বুলেন্স আটক রাখা হয়। পরে ছোট ভেটখালি ঈদগাহের পাশে তার বাবার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল অসীম মৃধাকে ১নং ও অরবিন্দ মণ্ডলকে ২ নং আসামী করে আরো ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় জিআর ১২৭/১০ নং মামলা দায়ের করেন। বিজলী বরকন্দাজ আরো জানান, মামলার তদন্তভার উপপরিদর্শক মুজাহিদুর রহমানের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক অমল রায়ের উপর ন্যস্ত হয়। এরপর মামলাটির তদন্তভার সিআইডির উপর ন্যস্ত হলে সিআউডি’র সাতক্ষীরার পুলিশ পরিদর্শক আমীর হোসেন ২০১১ সালের ৩০ মার্চ অসীম মৃধা, আব্দুর রউফ, রেজাউল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, জাকির হোসেন, টুটুল, রবিউল ইসলাম, আব্দুর রহিম, বাক্কার, ইয়ারব ফকির, মীনা খাতুন ও শেফালী মণ্ডলের নাম বাদ দিয়ে ২৩ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে নারাজির আবেদন করলে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুম তা মঞ্জুর করে নিজেই বিচারিক তদন্তভার গ্রহণ করেন। তদন্তে এজাহারভুক্ত সকল আসামীকে বিচারের আওতায় আনা হয়। বিচারিক তদন্তে স্বাক্ষী আজগার আলীর বক্তব্য বিচারক যথাযথভাবে না লিখে তা নিজের মত করে লিখে প্রতিবেদন দিয়েছেন এমন অভিযোগে প্রধান আসামী অসীম মৃধা ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৬২/১৩ নং রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ২ জুলাই সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী রিভিশন খারিজ করে দেন। গত ১৪ মার্চ জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম রেজাউন উজ জামান সকল আসামীদের বিচারের আওতায় এনে সিআইডির চুড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া ১৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। ফলে কয়েকজন আসামী উচ্চ আদালতে ও বিচারিক আদালতে হাজির হয়ে জেল খাটার পর জামিন মুক্তি পেলেও অসীম মৃধা ছিলেন বহাল তবিয়তে। । শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পশুপতি বরকন্দাজ হত্যা মামলায় শনিবার বিকেলে অসীম মৃধাকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।#