এম বেলাল হোসাইন: সাতক্ষীরা পার্সপোর্ট অফিসের ঘুষ ও দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অফিসে ফের সক্রিয় হয়েছে চ্যানেল ব্যবস্থা, পাসপোর্ট পেতে দারুণ হয়রানি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কি সাধারণ, কি জরুরি কোনভাবেই নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না পার্সপোর্ট বই। চুক্তিতে ও দালাল ধরে পার্সপোর্ট করতে গেলে কোন ঝামেলা হয় না। আবার যারা সাধারণভাবে পাসপোর্ট করতে যান তাদের ঝামেলার শেষ থাকে না। সাধারণ মানুষের অভিযোগ টাকা ছাড়া পার্সপোর্ট করতে গেলে অফিস কর্মকর্তাদের চাহিদার শেষ থাকে না, পারলে আমাদের ডি এন এ টেস্ট করিয়ে নিতো। এক শ্রেণীর দালালরা পুরো পাসপোর্ট অফিস জিম্মি করে রেখেছে। তাদের মাধ্যমে পার্সপোর্ট না করলে সাধরণ মানুষ পাসপোর্ট করতে পারে না। সাতক্ষীরা পার্সপোর্ট অফিসের বর্তমান উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) এস এম সাখাওয়াত হোসেন যোগদানের পর থেকে এই অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন চরমে পৌঁছেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, কাগজপত্র সব কিছু ঠিকঠাক করে গেলে প্রথমে হেল্প ডেস্ক থেকে বলবে আপনার ফরমে ভুল আছে। কোথা থেকে ফরম পূরণ করেছেন। তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে বলবে, ওখান থেকে করে নিয়ে আসেন। সেখানে ফরম পুরণ করতে গেলে তিন থেকে চারশত টাকা দিয়ে ফরম পুরণ করতে হয়। এরপর দালাল বা অফিসের পিয়ন দেখিয়ে বলবে উনাদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, পুরো অফিসে একটি অদৃশ্য চ্যানেল ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থার মূলে আছেন ডিএডি নিজে। তবে তিনি কোন দালাল থেকে নিজ হাতে টাকা নেন না। তিনি এই ক্ষেত্রে তারই অফিসের হিসাবরক্ষক ইন্দ্রিরা গাইনকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। তার হাত দিয়ে সব চ্যানেল ফাইলগুলোর টাকা উঠানো হয়। ইন্দ্রিরা ম্যাডামের কাছে ফাইল দেয় যথাক্রমে ডিএডির ডান হাত খ্যাত এম.এল.এস.এস মনির হোসেন, আনসার সদস্য সোহাগ, আনসার সদস্য হেদায়েত উল্লাহ, আনসার সদস্য ইমানুর রহমান, আনসার সদস্য ইজ্জত আলী যিনি ৩০/১০/১৯ তারিখ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, কবির হোসেন, আউট সোসিং লাভলু। এছাড়া পুরো বিষয়টি তদারকি করেন একই অফিসের সুপারেন্টেন্ড জগদিস চন্দ্র তাঁতী। প্রত্যেকটা ফাইল বাবদ এই সময় তারা অফিস কর্তৃপক্ষকে ১০০০ টাকা প্রদান করেন। আর যারা জমা দেয় তারা পার ফাইলে ৫০ টাকা হারে লাভ করে। আউট সোর্সিং লাভলুর কাছে ফাইল রেডি করে জমা দেয় শহিদ, কলারোয়ার বাবলু, কালিগঞ্জ বাঁশতলা এলাকার দেবনাথ, সনজয়। এম এল এস এস মনিরের কাছে ফাইল রেডি করে জমা দেয় কালিগঞ্জের তাপস, বিষ্ণুপুরের শক্তি, কলারোয়ার অমিত এবং গত ২৭/১০/১৯ তারিখে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রিপাড়া এলাকার তরিকুল ইসলাম।
তাছাড়া ঘুষের টাকা সপ্তাহে একবার ভাগ হয়। পুরো সপ্তাহে যে টাকা ওঠে তা থেকে সপ্তাহে ৬০০০ টাকা ভাগ পায় অফিসের মনির, কবির, লাবলু। বাকি টাকার ৪০% ভাগ পায় সুপারেণ্টেন্ড জগদিস চন্দ্র, হিসাব রক্ষক ইন্দ্রিরা গাইন, ডাটা এণ্ট্রি অপারেটর ইলিয়াস হোসেন, অফিস সহকারী রিপোন, অফিস সহায়ক সাইফুল ইসলাম। বাকি ৬০% টাকা একাই হজম করেন ডিএডি এস এম সাখাওয়াত হোসেন নিজে। এছাড়া একদিনে গড়ে ২০০-২৫০ ফাইল জমা পড়ে। কাউণ্টারে হয়ে ফাইল জমা পড়ে দিনে গড়ে ৫০-৬০টি। চ্যানেল ফাইলে নির্দিষ্ট চিহ্ন ব্যবহার করা হয় যাতে সহজে চেনা যায়। এদিকে শহরের মুনজিতপুর গ্রামের আমিনুর রহমান জানান, তিনি তার চাচীর জন্য সোমবার সকালে পাসপোর্ট করতে গেলে নানা ভাবে হয়রানির স্বীকার হন। তিনি বলেন পাসপোর্ট অফিসের এডির নিয়োগকৃত দালালর আসলে তাদের পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি হয়। আর যারা দালালের মাধ্যমে না আসে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। যারা ডিএডির দালালের মাধ্যমে আসেন তাদের খুব বেশি হলে সময় লাগে পাঁচমিনিট। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে টাকা দিলে সব হয়। এখানে ডিএডির কথা মতো সব হয়। তিনি সকাল ১০ টার ফাইল পেয়েছেন বিকাল তিন টার সময়। তাছাড়া অধিকাংশ সময় হেল্প ডেষ্কে লোক থাকে না। তাছাড়া মহিলাদের জন্য নেই আলাদা কোন কাউণ্টার। আশাশুনি উপজেলার আতিকুর রহমান জানান, তিনি আড়াই মাস আগে পাসপোর্ট করেছেন কিনÍু এখনও পাসপোর্ট হাতে পাননি। সাতক্ষীরা পলাশপোলের মোছা নূর জাহান জানন প্রায় দুই মাস অগে পাসপোট করলেও আজও তিনি পাসপোর্ট হতে পাননি, পায়রাডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল্লা বলেন সে কাতার যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করেছেন প্রায় দেড় মাস আগে তার ভিসার মেয়াস প্রায় শেষের পথে তিনি এখনও পাসপোর্ট হাতে পাননি। তিনি দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট করেছিলেন যাতে পাসপোর্টটি দ্রুত পান। এখন ডিএডির নিয়োগকৃত দালালরা বলছে পাসপোর্ট দ্রুত নিতে গেলে আরও এক হাজার টাকা বাড়তি দিতে হবে। এই টাকা ডিএডি স্যারের দিলে স্যার ঢাকায় দ্রুত কথা বলে পাসপোর্ট এনে দেওয়ার ব্যাবস্থা করবেন। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা পাসপোর্ট অফিস মনিটরিং করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এব্যাপারে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক এস এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেটি সঠিক নয়। দালালরা টাকা নিলে তার কিছুই করার থাকে না বলে তিনি জানান।