দেশের খবর: সাত শর্তে দেড় বছর মেয়াদ বাড়ল দেশের বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের। বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সুপারিশ এবং সেতু বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এ সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ৩ নভেম্বর অনুমোদন সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, এর আগে ৬ অক্টোবর আইএমইডির পক্ষ থেকে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে। সংস্থাটি প্রকল্পটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এ সুপারিশ দেয়। এরপর ২২ অক্টোবর সেতু বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যায়ে দেড় বছর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে পরবর্তীতে ব্যয়ও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এবার শুধু মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাওয়া গেছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে যে ৭টি শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো হল- প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক অগ্রগতি ও যথাসময়ে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ওয়ার্ক প্ল্যান প্রস্তুত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে দ্রুত সময়ে আইএমইডিতে পাঠাতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের অর্থ ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ায় প্রকৃত ব্যয়ের চিত্র তথ্য-উপাত্তসহ আইএমইডিতে পাঠাতে হবে। বর্ধিত সময়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া এক অংশের (কাজের অংশ) অর্থ অন্য অংশে ব্যয় করা যাবে না। পরবর্তীতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়কাল আর বৃদ্ধির অবকাশ থাকবে না।
ফলে বর্ধিত মেয়াদকালে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিবিড় মনিটরিং করবে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কিত মাসিক এবং ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অবশ্যই আইএমইডিকে জানাতে হবে। আইএমইডির সমাপ্ত মূল্যায়নের জন্য প্রকল্পটি শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই নির্ভুল তথ্য সংবলিত প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) জমা দিতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সময় বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের যৌক্তিকতা দেখিয়েছে সেতু বিভাগ। এর মধ্যে মূল নদীর ৪০টি পিলারের (পিয়ার) মধ্যে ২২টির পুনঃনকশা করা হয়। প্রতিটি পিলারে একটি পাইল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কারণে আরও ৮টি পিলারের পাইল ড্রাইভিং কাজও স্থগিত ছিল।
ফলে মোট ২২টি পাইল রি-ডিজাইন জরুরি হয়ে পড়ে। ইতিমধেই সব পিলারের পাইল রিডিজাইন সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া কনস্ট্রাকশন ড্রয়িং ঠিকাদারকে ইস্যু করা হয়েছে। যথাসময়ে ঠিকাদারকে পাইলের নকশা ইস্যু করা সম্ভব না হওয়ায় ঠিকাদারের সিডিউল অনুযায়ী নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়। ফলে মূল সেতুর নির্মাণ কাজও দেরি হচ্ছে। অপরদিকে ২০১৫ সালে মাওয়া প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তিন থেকে চার মিটার সেকেন্ড স্র্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সাড়ে ৫ লাখ ঘনমিটারের দুটি গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে ট্রায়াল সেকশনের কাজও দেরি হয়। এ সময় জরুরিভিত্তিতে নকশা অনুযায়ী ভরাট করতে সময় লাগে।
এ কাজে অতিরিক্ত ৬ মাস প্রয়োজন হয়। সেই সঙ্গে নদীশাসন কাজেও দেরি হয়। এক্ষেত্রে জাজিরা প্রান্তে নদী শাসনের ১ হাজার ১০০ মিটার ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক সময়ে শেষ হয়নি। নকশা অনুযায়ী ট্রায়াল সেকশনের কাজ সঠিক হয়নি। এই কাজ শেষ করতে দেড় বছর বেশি সময় লাগে। ফলে মূল কাজ নির্মাণে দেরি হচ্ছে। ফলে নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংশোধনী প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ডিপিপি’র ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিপরীতে গত জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে হয়েছে ১৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশ। এছাড়া শুধু মূল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। নদী শাসন কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে।