সাতক্ষীরা

এমপিও’র তালিকায় শিক্ষাদস্যু আক্তারুজ্জামানের ৩ কলেজ

By daily satkhira

November 11, 2019

নিজস্ব প্রতিনিধি : ২০১৯ সালের এমপিওভুক্ত ২৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের ভোকেশনাল শাখা, সুন্দরবন টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের বিএম শাখা ও প্রিন্সি: আখতারুজ্জামান বিজ্ঞান কৃষি কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের কৃষি ডিপ্øোমা শাখা এমপিওভুক্ত হয়েছে। ইছামতি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের ভোকেশনাল শাখা এমপিওর তালিকায় সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র ভোকেশনাল শিক্ষাক্রম। প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৪টি কক্ষবিশিষ্ট। যার একটি অধ্যক্ষের রুম, একটি টিচার্স রুম, অন্য দু’টি রুম ২০১০সালে এমপিওভুক্ত বিএম কোর্সের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নেই কোন ল্যাব, লাইব্রেরি। ভোকেশনাল শাখার দু’টি ট্রেডের জন্য নেই কোন ক্লাসরুম ও ল্যাব। নেই কোন শিক্ষক-কর্মচারী। কলেজটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাস জমির উপর স্থাপিত। অথচ কৌশলে আক্তারুজ্জামান যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করে তার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ইছামতি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের জমি ও অবকাঠামো দেখিয়ে ইছামতি কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট নামে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত সুন্দরবন টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অন্য একটি কলেজে কর্মরত। বাংলা প্রভাষক খুলনাতে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানীতে কর্মরত মুরাদুজ্জামানকে ২০লক্ষ টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রভাষক আঃ কাদের সাতক্ষীরা জজকোর্টের উকিলবারের বারান্দায় ফটোস্ট্যাটের ব্যবসা করে। কলেজটি ২০০৬সালে এভিএএস সংস্থার নামে ক্রয় করা জমিতে স্থাপিত। স্বীকৃতির পূর্ব শর্ত মোতাবেক নেই সুন্দরবন টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের নামে কোন জমি, নেই ২লক্ষ টাকার এফডিআর, ল্যাব। এমপিওভুক্ত প্রিন্সি: আখতারুজ্জামান বিজ্ঞান কৃষি কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজের নামে ৫লক্ষ টাকার এফডিআর নেই। জাল দলিল, জাল এফডিআরসহ বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। কৃষি ডিপ্øোমা শাখায় ২০০৫সালে নিয়োগ পরীক্ষা হলেও নিয়োগপত্র ছাড়াই শুধুমাত্র ভুদেব জীববিজ্ঞানে ও রফিকুল লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুন্য পদে এনটিআরসিএতে জনবল চাওয়ার কথা থাকলেও তা না করে এখন এইসব প্রতিষ্ঠানে নতুন করে উচ্চহারে ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রহ করে নিয়োগ পরীক্ষার রেজুলেশন, টেবুলেশনশিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে, পূর্বে ২০০৫/০৬সালে গঠিত নিয়োগবোর্ডের সদস্যদের জাল সিল তৈরি করে ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে বেতন-ভাতা ছাড়করনের প্র¯ু‘তি চলছে প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি দুর্নীতিবাজ বিএনপি নেতা ও শিক্ষাদস্যু হিসেবে খ্যাত মোঃ আখতারুজ্জামানের বাড়ির নীচতলায়। প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি শিক্ষাদস্যু থেকে শিক্ষাদানবে পরিনত হওয়া মোঃ আখতারুজ্জামান সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এ্যাডঃ আব্দুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। জাল সার্টিফিকেটে অত্র কলেজে তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানার এমপিওভুক্তি ও অন্য ৪জন শিক্ষকের পাঠদানের অনুমোদন নেই এমন ৪বিষয়ে বেতন করানোর অপরাধে ২০১৭সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অধ্যক্ষসহ তাদের এমপিও বাতিল ও উত্তোলিত সরকারি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ হয় এবং তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানার বিরুদ্ধে জাল সনদের জন্য ফৌজদারী মামলা দায়েরের নির্দেশ হয়। সেমতে অত্র কলেজের সভাপতি আবুল হোসেন মো: মকছুদুর রহমান অধ্যক্ষ মোঃ আখতারুজ্জামান ও তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ ১নং আমলী আদালত,সাতক্ষীরাতে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন। তারপরও জাল সনদে সেলিনা সুলতানা ২০০৫সাল হতে আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে পরিচালিত এভিএএস টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিবিধ দুর্নীতির দায়ে অধ্যক্ষ মোঃ আখতারুজ্জামানকে এ্যাডঃ আব্দুর রহমান কলেজ থেকে ২০১৯সালে অপসারনপূর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আখতারুজ্জামানের কাছে সরকারের ১কোটি ১লক্ষ ৫৭হাজার ০৯টাকা ইনকাম ট্যাক্স পাওনা আছে। যা তিনি পরিশোধ না করে টালবাহানা করে চলেছেন। দুর্নীতিবাজ মোঃ আখতারুজ্জামান জমির জাল দলিল, জাল এফডিআরসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে নিজে সভাপতি হিসেবে সাতক্ষীরাতে প্রায় ১৪টি, খুলনাতে ২টি ও ঢাকাতে ১টি কারিগরি কলেজের অনুমোদন নিয়েছেন। ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএম, ভোকেশনাল, কৃষি ডিপ্লোমাসহ একাধিক শাখারও অনুমোদন নিয়েছেন। কোন কলেজের নামে এফডিআর নেই। সকল কলেজের বিভিন্ন শাখায় জনপ্রতি ৫ থেকে ১০লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তিনি আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক। ইতিপূর্বে ২০০৩সালে খলিষখালি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের বিএম শাখা এমপিওভূক্ত হয়; যা পরবর্তীতে কলেজের সভাপতি মো: আখতারুজ্জামান কলেজের নামে ব্যাংক হিসাবের পাসবইতে কম্পিউটার কারসাজির মাধ্যমে ১৫লক্ষ টাকা দান হিসেবে জমা দেখিয়ে কলেজটি নিজের নামে প্রিন্সি: আখতারুজ্জামান বিজ্ঞান কৃষি কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ নামে নামকরন করেছেন। ২০১০সালে ইছামতি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজ, শ্যামনগর টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজ, এভিএএস টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজ ও খুলনার খানজাহান আলি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের বিএম শাখা এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে অবৈধভাবে তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা খুলনার খানজাহান আলি টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজের সভাপতি। বাল্যবন্ধু পাটকেলঘাটা হারুনার রশিদ কলেজের প্রভাষক ফকির আহমেদ শাহ, সুন্দরবন টেকনিক্যাল অ্যা- বিএম কলেজ ও পাটকেলঘাটা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যা- কলেজের সভাপতি। ভগ্নিপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মফিজুর রহমান খান চৌধুরি ঢাকার এভিএএস কলেজের সভাপতি। বাকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি হিসেবে আছেন বিএনপি নেতা ও শিক্ষাদানব আখতারুজ্জামান নিজেই। আর এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অফিস হতে রেজিঃকৃত এভিএএস নামের একটি সংস্থার অধীনে। যার নির্বাহী কমিটিও গঠিত হয়েছে বিধি পরিপন্থীভাবে স্ত্রী, ভাই, বোন, মামা নিয়ে। বর্তমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী আওয়ামীলীগ সরকারের সময়েও জাল কাগজপত্র ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এক সময়ের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার, বিএনপি নেতা ও শিক্ষাদস্যু থেকে শিক্ষাদানবে পরিনত হওয়া অধরা দুর্নীতিবাজ আখতারুজ্জামানের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে সাতক্ষীরার শিক্ষানুরাগী সচেতন জনসমাজ হতাশ।