খেলা

আজ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টাইগারদের অভিষেক

By Daily Satkhira

November 14, 2019

খেলার খবর: টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে ১ আগস্ট ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে। এর এক সপ্তাহ পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলে ভারত। নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকাও খেলেছে। বাকি ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। টাইগারদেরও আজ অভিষেক হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।

ইন্দোরে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অন্য রকম এক অভিষেক হবে মুমিনুল হকদের। বাংলাদেশ দলের কাছে এই সিরিজের গুরুত্বও তাই একটু বেশি, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে চান মুমিনুলরা। অন্যদিকে স্বাগতিক ভারত চায় জিততে। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে এবং চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী ভারত। এ সিরিজ থেকেও পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখার কথাই জানালেন বিরাট কোহলি।

টাইগার দলপতি মুমিনুল জোর গলায় কিছু বলতে পারেননি। সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে ভালো ক্রিকেট খেলার কথাই বলে গেলেন। ভালো ক্রিকেট খেলার অর্থ তো ম্যাচ জেতা। মুমিনুল হয়তো পরোক্ষভাবে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন।

ভারত বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরও শীর্ষে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে ২৪০ পয়েন্ট অর্জন তাদের। এ ছাড়া দেশের মাটিতে টানা ১১ সিরিজে অপরাজিত। এবার হোমে দ্বাদশ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন কোহলির। নিজেদের গড়া রেকর্ড ভাঙার চ্যালেঞ্জও। পরিশ্রম করে খেলে ইন্দোর টেস্ট জিতে পূর্ণ পয়েন্ট যোগ করার প্রতিশ্রুতি স্বাগতিক মিডিয়াকে দিলেন কোহলি। এমন প্রবল শক্তিধর একটি দলকে টেস্টের মতো বেসিক ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া মুমিনুলের জন্য সত্যিই কঠিন। এ কারণে সংবাদ সম্মেলনেও ডিফেন্সিভ থাকলেন সারাক্ষণ।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বললেন, ‘আমার মনে হয়, সবাই অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে খেলবে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে সবাই একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে। খেলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু, সেটা আবার ভারতের বিপক্ষে। সবাই পারফর্ম করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’

বাংলাদেশ বেশ কিছু নতুনত্ব দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজটা শুরু করছে। অধিনায়ক মুমিনুলের নতুন শুরু। গুরুত্বপূর্ণ দু’জন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়া খেলতে হচ্ছে। ভারতের মাটিতে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ এটি, যেখানে গোলাপি বলে দিবারাত্রির ম্যাচ হবে কলকাতায়। এ ছাড়া এটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজের অংশ। এদিক থেকে ক্রিকেটাররা রোমাঞ্চকর একটা সিরিজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

বিশ্বের সেরা টেস্ট দলের বিপক্ষে খেলতে পারাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘আমার কাছে পুরোটাই সুযোগ। যখন আপনি বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলবেন, যারা তিনটা বিভাগেই খুব ভালো, তাদের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে পারলে সেটা আপনার জন্য খুব ভালো ব্যাপার হবে।’

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছে, যেখানে টাইগারদের কোনো জয় নেই। বৃষ্টির কারণে দুটি টেস্ট ড্র হয়েছে। ভারত যে সাতটি ম্যাচ জিতেছে, তাতে ছিল কোহলিদের দাপট। এর আগে ভারতের মাটিতে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত সে টেস্টে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান দারুণ ব্যাট করেন। মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল মাঠের খেলায়। যদিও ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিরাট কোহলি বলেছিলেন, বাংলাদেশের কাছ থেকে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করেছিলেন তিনি। কারণ, ওই টেস্ট ম্যাচটি ২০৮ রানে জিতেছিল ভারত।

দুই বছর আগে খেলা হায়দরাবাদ টেস্টের চেয়েও ইন্দোর টেস্ট ম্যাচটি টাইগারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। টি২০ সিরিজের পর টেস্টের জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায়নি দল। কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়াই খেলতে হচ্ছে লাল মাটির পিচে। এ ধরনের উইকেটে একটু বাউন্স থাকে। পেস বোলাররা ভালো করেন। টেস্টে ভারতের শক্তির জায়গাও এখন বোলিং। মোহাম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবকে নিয়ে পেস বোলিং ইউনিট স্বাগতিকদের। এই তিন পেসারকেই আজ খেলাবেন বলে জানান বিরাট কোহলি। এ ছাড়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার মতো বিশ্বমানের স্পিনার আছে দলটিতে। এই হলকার স্টেডিয়ামে ২০১৬ সালে অশ্বিন ১৩ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডকে।

সেখানে স্পোর্টিং উইকেটে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা খুবই কম টাইগারদের। পেস অ্যান্ড বাউন্সি পিচে যে ক’টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিমরা, তাতে সুখের স্মৃতি খুবই কম। এ ছাড়া টাইগারদের বর্তমান টেস্ট স্কোয়াডটা খুব বেশি অভিজ্ঞও নয়। সিনিয়র ক্রিকেটার বলতে মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক ও ইমরুল। তাদের মধ্যে কেবল মুশফিকুর রহিমই ৬৭টি টেস্ট খেলেছেন। ৫০ টেস্ট খেলা দ্বিতীয় কোনো ক্রিকেটার স্কোয়াডে নেই। মুমিনুল বয়সে তরুণ হলেও অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। ৪১ ব্যাটিং গড় নিয়ে টাইগারদের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানও তিনি। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এ সিরিজে বড় কিছু আশা করতেই পারে দল। সম্প্রতি ভারত ও শ্রীলংকায় বিসিবি একাদশ ও ‘এ’ দলের সিরিজ খেলেছেন তিনি। তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজরা শ্রীলংকায় সিরিজ খেলেছেন। তারা প্রত্যেকেই ছন্দে ছিলেন। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন খুশি ছিলেন ‘এ’ দলে তারকাদের পারফরম্যান্সে। স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানের কাছে ঘরের মাঠে টেস্ট হারের দুঃস্মৃতি ভুলতে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার চেষ্টা করবেন তারা।

প্রধান নির্বাচক নান্নু জানান, ইন্দোর টেস্টে সাত ব্যাটসম্যান রেখে একাদশ সাজাতে চান তারা। স্পোর্টিং উইকেট হলেও দুই পেসার ও দুই স্পিনার রাখা হবে একাদশে। এবাদত হোসেন ও আল-আমিন হোসেনের খেলার সম্ভাবনা বেশি। স্পিন বিভাগে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটিংয়ে সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েসকে দেখা যেতে পারে ওপেনিংয়ে। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ, লিটন কুমার দাস ও মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ব্যাটিং লাইনআপ সাজানো হতে পারে। এই ম্যাচ দিয়ে উইকেটকিপিং থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন মুশফিকুর রহিম। লিটন দাঁড়াবেন স্টাম্পের পেছনে। শেষ কথা হলো, কোনো চমক থাকলেও থাকতে পারে। কারণ, দলটি বাংলাদেশ এবং যারা লুকোছাপা করতে ভালোবাসে। এ ছাড়া টি২০র মতো টেস্টেও নতুন কাউকে খেলিয়ে সফল হতেও তো পারে।