তালা

তালার বালিয়া গ্রামে কাঁকড়া চাষে বিপ্লব

By Daily Satkhira

April 02, 2017

মনজুরুল হাসান বাবুল : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির ভিত্তি চিংড়ি চাষ বা ‘সাদা সোনার’ দিন যেন ফুরিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উন্নত প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ। বাড়তি লাভের আশায় চিংড়ি চাষ বন্ধ করে চাষিরা ঝুঁকছেন কাঁকড়া চাষের দিকে। কাঁকড়ার চাহিদা আর দাম পিছনে ফেলেছে চিংড়িকে। কম শ্রম ও কম খরচায় ঘেরে এখন চাষ হচ্ছে কাঁকড়া। উপকূলীবর্তী এলাকার লবণপোড়া ফসলহীন জলাভূমিতে প্রায় অবহেলিত জলজ প্রাণি কাঁকড়া চাষে মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে, সচ্ছলতার মুখ দেখছে লাখো চাষি পরিবার। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনে সর্বস্বান্ত চিংড়ি চাষিরা অনেকটা বাধ্য হয়েই কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন। একসময় এ অঞ্চলের মানুষেরা চিংড়ি চাষের দিকে ঝুঁকেছিল ব্যাপকভাবে। কিন্ত তা থেকে আস্তে আস্তে বের হতে শুরু করেছে চাষিরা। চিংড়ি চাষ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারেনি, তা বলা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে অনেক মানুষ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সক্ষম হয়েছে আবার বিভিন্ন দুর্যোগ ও ভাইরাসজনিত কারণে অনেকেই ফকির বনে গেছে। সুতরাং কাঁকড়া নিয়ে মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। অনেকের ভাবনা চিংড়ি চাষের ক্ষতি চুকিয়ে নেবে কাঁকড়া থেকে। দেশের বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা অভাবনীয়। কাঁকড়া চাষ করে আবারো উঠে দাঁড়াচ্ছেন চাষিরা। ঘের এলাকায় চিংড়ির মোকামগুলো কাঁকড়ার মোকামে রূপান্তরিত হচ্ছে। চিংড়ির আড়তের চেয়ে বাড়ছে কাঁকড়ার আড়তের সংখ্যা। কাঁকড়া চাষে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। নেই বিনিয়োগের ঝুঁকি। প্রক্রিয়াকরণে জটিলতা বা দ্রুত পচনেরও ভয় নেই। চিংড়ির মতো পোনা কিনতে হয় না কাঁকড়ার। প্রাকৃতিকভাবেই লোনা পানিতে কাঁকড়া জন্মায়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এবং জুন থেকে জুলাই হচ্ছে কাঁকড়ার প্রজননকাল। এ সময় গভীর সমুদ্রে ও সুন্দরবনের মধ্যে ডিম থেকে কাঁকড়া জন্ম নেয়। এসব পোনা পানিতে ভেসে এসে নদ-নদী, খাল ও মাছের ঘেরে আশ্রয় নিয়ে বড় হয়। নদী থেকে ঘেরে পানি উঠালেই লাখ লাখ পোনা পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে সাফল্যের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। বৃহত্তর খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারসহ উপকূলে বহু এলাকায় হচ্ছে কাঁকড়ার চাষ। দক্ষিণাঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েক হাজার কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। এমনই কাঁকড়ার খামার করে জীবনের চাকা ঘুরাতে সফল হয়েছেন তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের মোঃ জুলফিকার আলী (ভুট্টো)। চার বছর আগে তিনি মাত্র দশ শতক জমিতে কাঁকড়া চাষ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি চার বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করছেন। তার সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই বিভিন্নভাবে কাঁকড়া চাষ করেন তাতে তারা কেমন লাভবান হয় আমি তা জানি না, তবে আমি উপজেলা মৎস্য অফিসারের পরামর্শ মত আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করি। কাঁকড়া চাষের সুবিধা-অসুবিধা সর্ম্পকে জানতে চাইলে বলেন, এটি তুলনামূলক কম খরচে চাষ করা যায় এবং এর বাজার মূল্য ভাল। ছোট-খাট কিছু রোগ দেখা যায় যা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। কাঁকড়া চাষে আমার লাভ বেশ সন্তোষজনক। আমি মনে করি আমার মত অনেকের কাঁকড়া চাষ করা উচিত। কাঁকড়া চাষ সম্পর্কে তালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আধুনিক-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করলে তুলনামূলক কম খরচে অনেক লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এটি  উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। সরকার কাঁকড়া চাষিদেরকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে নানা সাহায্য-সহযোগিতা করছে। বালিয়ার জুলফিকারের মত আরো অনেকেরই কাঁকড়া চাষে এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি  মনে করনে।