নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তারই পারে মৌলবাদকে রুখতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং সেই আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে পারলেই সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তি পরাজিত হবে। সোমবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দারুণ সব মুহূর্ত এবং জাতির জনকের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবিনাশী বার্তা শুনিয়ে শেষ হলো সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ বইমেলা। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের মেলবন্ধনেরবেইমলো প্রাঙ্গণ একদিন মুখরিত ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে।
শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বড় পরিসরে এ বই মেলায় আয়োজন করা হয় এবার। সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি। শেষ দিন সোমবার দুপুর ১টা থেকে শুরু হওয়া মেলা চলে অন্যান্য দিনের মতো গভীর রাত পর্যন্ত। মেলার শেষদিন সন্ধ্যায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, এমপি পত্নী নাসরিন খান লিপি, জেলা প্রশাসক পত্নী লাভলী কামাল, পুলিশ সুপার পতত্নী নাহিদা আফরোজ, পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক রাসেল কামরুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোশফিকুর রহমান মিল্টন। সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সুবর্ণ জয়ন্তী ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এ বইমেলার উদ্বোধন করা হয় গত ১৬ নভেম্বর।
‘বই দেখাবে আলোর পথ, গড়বো নতুন ভবিষ্যত’ এই স্লোগানে সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরির ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বইমেলার উদ্বোধন করা হয়েছিলো। সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ১৬ নভেম্বর এ বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলা প্রাঙ্গণে বসে দল বেঁধে আড্ডা, সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠা বাংলা গান, ছোট শিশুদের আর বাংলা বই নিয়ে সবার অনাবিল উচ্ছ্বাস। এবারের মেলায় অংশ নিয়েছেন স্বনামধন্য লেখক ও প্রকাশকেরা। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বগুলো মেলায় যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। বিভিন্ন আলোচনা পর্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয়গুলো ছিল সৃষ্টিশীলতা ও বিকাশে লেখক প্রকাশকের ভূমিকা। আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের পরিবেশনা, শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী মেলার আকর্ষণ বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এবারের বইমেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকতের উপস্থাপনায় কুইজ প্রতিযোগিতা সবার নজর কাড়ে। এছাড়া সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের গাছের পাঠশালার পক্ষ থেকে বৃক্ষ ও গ্রামীণ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ প্রদর্শণ দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। মেলায় প্রতিদিন স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সঙ্গীত, আবৃত্তি, অভিনয় ও উপস্থাপনা ছিলো নান্দনিক। আড্ডায় আড্ডায় কেটেছে ১০টি বিকেল। স্মরণকালের এ সাহিত্য আড্ডায় মিলেছে লেখক, কবি সাহিত্যিক ও পাঠকরা। স্থানীয় লেখকদের বই এবারের মেলায় পাঠকদের নজর কেড়েছিলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, দ্বিচারিতা নয়, সাতক্ষীরার উন্নয়নে, সাতক্ষীরাবাসীর উন্নয়নে প্রাণ সায়ের খালের পূর্বের রূপ ফিরিয়ে দিতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শহরের সংকীর্ণ রাস্তার সম্প্রসারণ করতে হবে। ক্লিন সাতক্ষীরা গ্রিন সাতক্ষীরা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরপর দুইটি বই মেলা সফলভাবে শেষ হওয়ায় তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জেলা প্রশাসকের প্রতিটি কর্মসূচিই সাতক্ষীরাবাসীর জন্য কল্যাণকর। এই বই মেলা তার উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর শিকড় উপড়াতে, সাংস্কৃতিক বিপ্লবে এবং জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এর চেয়ে ভাল আয়োজন আর হতে পারে না। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মুজিব আদর্শের সৈনিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরির প্রকাশনায় কোন রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীর নাম থাকবে না। চিরতরে মুছে ফেলা হবে রাজাকারদের নাম। প্রকাশনায় স্বাধীনতা বিরোধীদের কযেকজনের নাম স্থান পাওয়ায় জেলা প্রশাসক দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে এবং স্রোত নামে এ প্রকাশনা বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলা গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সাতক্ষীরার অতীতের জঙ্গিবাদের কলঙ্ক মুছে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকেই সাদা জামা গায়ে দিয়ে দুর্নীতি করছেন। তাদেরকে দুর্নীতির পথ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক বলেন, ক্লিন সাতক্ষীরা-গ্রীন সাতক্ষীরা’ গড়ার লক্ষ্যে আগামী শনিবার থেকে সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার অভিযান শুরু হবে। প্রশাসনের এ কাজে সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে ও মেলার স্টলকে পুরস্কৃত করা হয়।