ফিচার

৭০০ নারীকে ধর্ষণ শেষে সৌদি গিয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল!

By Daily Satkhira

November 26, 2019

ভিন্ন রকম খবর: টার্গেট ছিল বিয়ের নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ৭০০ মেয়েকে ধর্ষণ করা। তারপর সৌদি আরব গিয়ে নিজের পাপ মোচন করা হবে। সেই লক্ষ্যে নানা কৌশলে ১৪ বছরে ২৮৭ জন মেয়েকে ধর্ষণসহ সর্বস্বান্ত করেছেন। এর মধ্যে এক নারীর ধর্ষণ মামলায় ধরা পড়ে স্বপ্ন ভেস্তে যায় বিকৃতরুচি সম্পন্ন এই যুবকের। তিনি এখন জেলে আছেন। কেই সেই যুবক?

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম রাব্বী হোসেন চৌধুরী। তবে পরিচয়পত্রটি নকল, নিজের ইচ্ছেমত তথ্য যুক্ত করে বানানো হয়েছে। কখনো তিনি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের এমডি, কখনোবা করপোরেট হাউসের জিএম। চলাফেরায় বেশ ধোপদুরস্ত, কথাবার্তায় ঝলকে উঠে হাই ক্লাস সোসাইটির ফুলঝুরি। দুই দিন আগে এই খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে এই তরুণকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারীরা ছিল এই যুবকের টার্গেট। মিষ্টি কথার জাদুতে আকৃষ্ট করে তিনি তরুণীদের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ।

দু-একজন নয়, এ পর্যন্ত ২৮৭ তরুণীকে সর্বস্বান্ত করেছেন তিনি। এহেন পাপের পর পরিশুদ্ধ হতে সৌদি আরবেও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। তবে তার আগে পাপকর্মের ঝোলাটি আরো ভারী করে নিতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন ৭০০ তরুণীকে ধর্ষণের পরই সৌদি আরবে যাবেন তিনি।

বিকৃত মানসিকতার মারাত্মক ধূর্ত এ রয়েল-চিটারের প্রকৃত নাম জাকির হোসেন বেপারি। ডাক নাম রাব্বি।তার বয়স এখন পঁয়ত্রিশ।তিনি বিয়ে করেছেন ২৮৭টি। এ কাজটি করেছেন মাত্র ১৪ বছরে। প্রথম বিয়ে করেন তখন বয়স ছিল একুশ। বিয়ে আর প্রতারণার মধ্যে দিয়েই চলছিল রাব্বির জীবন। তিনি কোনো চাকরি করেন না । করেন না ব্যবসাও। তবুও চলাচল করেন দামি গাড়িতে। দামি দামি পোশাক পরিধান আর পটু কথায় ভোলাতেন তরুণীদের। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার আদিত্যপুর থানার দূর্গাপুর। পিতার নাম মৃত মনির হোসেন। বর্তমান ঠিকানা আহসান মোল্লা রোড, আইচপাড়া, টঙ্গী। আর বিয়েটা করার আসল উদ্দ্যেশ ছিল ধর্ষণ এবং টাকা কামানো। আর শুধু বিয়ে নয়, গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করতেন।

লালমনিরহাটের যুবক জাকির হোসেনের নাকি ৭শ’ বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু গত বুধবার তেজগাঁও থানায় এক ছাত্রীর ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় তার সেই বাসনা থমকে গেছে। যদিও ২৮৭ নারীকে তার বিয়ে করা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশবাসীর মনে প্রশ্ন কিভাবে এতগুলো নারীকে একজন যুবকের পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব হলো?

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্ত, আত্মনির্ভরশীল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী নারীদেরকে টার্গেট করতেন প্রতারক জাকির হোসেন। এরপর ভুয়া নাম দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে তাদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতেন। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নিজেকে বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা, আবার কখনো বড় ব্যবসায়ীর মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কখনো নিজের এসব মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ফেসবুকে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিতেন। এসব দেখে অনেক নারী নিজে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আবার কোনো টার্গেট নারী তার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট না করলে তার মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতেন।

একবার কোনো নারীর সঙ্গে কোনো ভাবে যোগাযোগ করতে পারলেই ধীরে ধীরে সেটা প্রেমের আলাপে নিয়ে যেতেন। এরপর তার মোবাইল নম্বর চাইতেন। তখন মোবাইলে দিন-রাত কথা বলা শুরু করতেন। মিষ্টি কথা বলে তার প্রতি দুর্বল করতেন নারীদের। পরবর্তীতে নিজের মিথ্যা আভিজাত্য তুলে ধরতে দামি পোশাক পরিধান আর দামি গাড়ি নিয়ে এসব নারীদের সঙ্গে দেখা করতেন। খাওয়া দাওয়া করতেন দামি রেস্তরাঁয়। নারীদের কাছে কখনো কখনো নিজেকে এতিম বলে দাবি করতেন, বিয়ের সময় বাবা-মায়ের ঝামেলায় যেতে না হয়। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে নারীদের বলতেন তার ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা প্লট ও ফ্ল্যাট আছে। এরপর যখন বুঝতে পারতেন নারীরা তার প্রতি পুরো দুর্বল হয়ে গেছেন তখন কৌশলে বিয়ের প্রস্তাব দিতে বসতেন।

একপর্যায়ে ভুয়া কাজী দিয়ে মিথ্যা কাবিননামায় বিয়ে করতেন। কিন্তু বিয়ের পরই তার আসল চেহারা বেরিয়ে আসতো। একের পর এক ফন্দি এঁটে নববধূ ও তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন। প্রাথমিক কৌশল হিসেবে ওই নারীর বাবা মায়ের কাছে বিয়ে পরবর্তী দোয়া নেয়ার জন্য দেখা করতে যেতেন। জানতেন নতুন জামাইকে বরণ করে তার শশুর-শাশুড়ি নানা উপহার দিবেন। তাই হয়তো নগদ টাকা, স্বর্ণের আংটি, গলার চেইনসহ নানা উপহার পেতেন। এরপর কৌশলে স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। কিছু দিন যাবার পর সেই ছবি দিয়ে স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন।

জানা গেছে, পরিচয় থেকে শুরু করে প্রেম, বিয়ে এবং ছাড়াছাড়ি সবকিছুতে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে করতেন। তার কৌশলের কাছে সহজ-সরল নারীরা হার মানতেন। যখন বুঝতে পারতেন বা ধরা পড়তো তার প্রতারণা তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যেত। মান সম্মানের ভয়ে অনেক নারীই তাদের পরিবার এমনকি থানা পুলিশের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করতেন না।

পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকির হোসেনের রয়েছে এক সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন।

তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার জানান, সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন বাব্বি। অবশ্য এবার তিনি নিজেই ফাঁদে পড়েন, আগেভাগেই প্রতারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন রাব্বির উদ্দেশ্য।

ওই তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে গত ৩১ অক্টোবর রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয়। এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে রাব্বি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর গত ৭ নভেম্বর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। নানা বিপদ বা সমস্যার কথা বলে জাকির ওই তরুণীর কাছ থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।

ওসি জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে রাব্বির তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ত্রিনশট ও ও ভিডিও ক্লিপ।

তেজগাঁও থানায় তরুণীর দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি স্বীকার করেছেন, বিয়ে করে টাকা পয়সা নিয়ে নিঃস্ব করে চলে যেতেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রাব্বির বেশ কয়েকজন সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এরমধ্যে ১৪ জন স্ত্রীর কাবিননামাসহ কাগজপত্র পেয়েছি।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করেন মণিপুরি পাড়ার একটি ছাত্রী হোস্টেলের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণী। অভিযোগের ভিত্তিতে সে দিনই জাকির ও তার সহযোগী জায়েদা আক্তার শাপলাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আহমেদ জাকিরের ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড না চাওয়ায় শাপলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।