দেশের খবর: শীতকালে সবসময় সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কম থাকে। এবারও তাই থাকার কথা, বাজারেও কোন জিনিসের কমতি নেই। কিন্তু মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করার কারণে লাগামহীন ভাবে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। শুধু কি পেঁয়াজ, ভরা মৌসুমেও নাগালের বাইরে সবজির দাম। রোববার (৮ ডিসেম্বর) কথা প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বজারে আলম নামের একজন ক্রেতা জানালেন, বর্তমানে যেভাবে বাজার ব্যবস্থা চলছে তা এক কথায় নিয়ন্ত্রণহীন। হিসাব করে এখন আর পণ্য কেনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিংবা অন্যের পণ্যের সঙ্গে কাটছাঁট করে মিলাতে হচ্ছে হিসাব।পেঁয়াজ নিয়ে সরকার তৎপর থাকলেও দাম এখনও ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সরকারি হিসাবেই গেল এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬৫৩ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০০ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির এমন উলম্ফনে নাভিশ্বাসে ক্রেতারা। খুচরা বাজারে রোববার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক হিসাবে জানিয়েছে, ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফ হয়ে দেশে এসেছে ১ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হয়ে এসেছে ২ হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। এগুলোর মধ্যে মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন, চীন থেকে ৩৮৪ মেট্রিক টন, মিসর থেকে ৮৪ মেট্রিক টন এবং তুরস্ক থেকে ২ হাজার নিয়ন্ত্রণহীন বাজার।
একটি বাজারে বাজার করতে আসা আসিফ রহমান জানান, দীর্ঘ সময় ধরেই অস্থিতিশীল বাজার দর। সরকারের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। এখনও বাড়তি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন ভরা সবজির মৌসুম। নতুন নতুন সবজিও আসছে বাজারে। কিন্তু দাম নাগালের বাইরে। বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের শাকের মধ্যে পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫/২০ টাকায়। লাল শাক বিক্রি হচ্ছে ১০/১৫ টাকায়। লাউ শাক ৩০ টাকা আঁটি। ডাঁটা শাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা আঁটি।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের মশলার দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখাচ্ছে সরকারের প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তাদের হিসাবে গেল এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। আর আমদানি বা মানভেদে বিভিন্ন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশের কাছে। পেঁয়াজের দাম দৃশ্যমান হলেও মানভেদে বিভিন্ন মশলার দাম বৃদ্ধিও থেমে নেই।
টিসিবির হিসাব বলছে, গেল এক বছরে রসুনের দাম বেড়েছে ১৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছর আগে যে রসুন ক্রেতা ক্রয় করতেন ৪০ থেকে ৮০ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়। দেশি রসুন মানভেদে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এ হিসাবে রসুনের দাম এক বছরে বেড়েছে ২৪০ শতাংশ। আমদানি করা রসুনেও একইভাবে দাম বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। শুকনো মরিচের দাম এক বছরে বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আর গেল এক মাসে বেড়েছে ১৭ শতাংশ। বর্তমানে শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। যেখানে এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়।
নতুন করে চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে ভোক্তাদের মধ্যে। রোববার বিভিন্ন বাজারে মিনিকেট প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। কেজি প্রতি দুই টাকা দাম বেড়ে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। তবে সুগন্ধি চাল কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।