জাতীয়

ময়মনসিংহে গ্রেপ্তার ৭ ‘জঙ্গি’র একজন ছাত্রলীগ নেতা

By Daily Satkhira

April 05, 2017

ময়মনসিংহ শহরে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতাও রয়েছেন। তিনি হলেন জেলার ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল আমিন (২৫)।

সোমবার দুপুরে আল আমিনসহ সাতজনকে ময়মনসিংহ শহরের কালীবাড়ী সড়কে আওয়ামী লীগের নেতা মরহুম অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল কাদিরের ছেলে অ্যাডভোকেট আসিফ আনোয়ার মুরাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ধোবাউড়া ছাত্রলীগ, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র মতে, গ্রেপ্তার হওয়া আল আমিন ধোবাউড়ার বাঘবেড় ইউনিয়নের মুন্সিরহাট দিঘিরপাড় গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেনের ছেলে। আল আমিন একসময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনির সঙ্গে চলাফেরা করতেন। পরে মুন্সীরহাটে সারের ব্যবসা শুরু করেন। ছয়-সাত মাস আগে তিনি ওই ব্যবসা ছেড়ে দেন। ওই সময়ে হঠাৎ তাঁর মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষণ করা যায়। আল আমিন দাড়ি রাখেন এবং নিয়মিত নামাজ পড়েন। গত ২৪ মার্চের পর তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর বাবার তেমন জমিজমা নেই। তবে দু-তিন মাস ধরে মাছের হ্যাচারির ব্যবসা করেন। ব্যবসার পুঁজি কীভাবে সংগ্রহ করেছেন তা কারো জানা নেই। জমিজমা বিক্রি করার খবরও কেউ জানেন না।

আল আমিনের চাচাতো ভাই বাঘবেড় ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন জানান, জঙ্গি সন্দেহে আটক সাতজনের মধ্যে হালুয়াঘাট উপজেলার দরিয়াকান্দা গ্রামের মারফত আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে দুই বছর আগে আল আমিনের পরিচয় ঘটে। আল আমিন ব্যবসা ছেড়ে দিলে তাঁকে নিজের ব্যবসায় পার্টনার করে মাছের খাবারের ব্যবসা শুরু করেন।

বাঘবেড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ হোসেন মিলন জানান, আল আমিন একজন আওয়ামী পরিবারের ছেলে। তাঁর চাচাতো ভাই জাকির হোসেন ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। চাচা মোফাখখারুল ইসলাম ছাত্রলীগের ইউনিয়ন শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আল আমিন সামনের সারিতে থাকতেন। এই হিসেবে তাঁকে ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়ছে। তিনি জঙ্গি প্রমাণিত হলে অথবা কোনো খারাপ কাজে জড়িত থাকলে অবশ্যই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।

ধোবাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি বলেন, ‘আল আমিন একসময় ছাত্রলীগ করতেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে যোগদান করতেন। তাঁর বর্তমান পরিচয় ছাত্রলীগের আদর্শ পরিপন্থী।’ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তাঁর কঠোর শাস্তি ও বিচার দাবি করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।

ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলম বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি, আল আমিন ছাত্রলীগ করতেন। বাবা মাছের হ্যাচারির ব্যবসা করেন। দুই ভাই-বোন রেখে মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। বাবা পরে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আরো দুই সন্তান হয়। আল আমিন সৎমায়ের ঘরেই বড় হয়েছেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আল আমিন ছোট, সহোদর বড় বোন বিবাহিত, একজন স্কুলশিক্ষক।’

এদিকে ঢাকা থেকে পুলিশের এসবির বিশেষ দল ও ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে আটক সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে এখনো মামলা হয়নি।

গত সোমবার জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য সন্দেহে সাতজনকে কালিবাড়ী সড়কের একটি বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। বাড়িটি থেকে একটি কম্পিউটার, একটি মোটরসাইকেল, একটি ব্যাংকের চেকবই ও বেশ কিছু বইও জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন—জেলার ধোবাউড়া উপজেলার আল আমিন (২৫), হালুয়াঘাট উপজেলার শহীদুল ইসলাম (২৮) ও আশিকুর রহমান (২৮), নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শাহ আল রোমান শামীম (২৭), মাসুম আহমেদ (৩০) ও রুমান মিয়া (২৭) এবং জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নাসির উদ্দিন (২৭)। তাঁদের মধ্যে মাসুম তিনটি ভোগ্যপণ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিলার। নাসির উদ্দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।

আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আটকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সার একটা হিসাব পাওয়া গেছে। তাঁদের কাছে ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের একটি চেক পাওয়া গেছে। টাকা এখান থেকে অন্য কোথাও পাচার করেছে। বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত করে দেখতে একটু সময় লাগবে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে পুলিশ ওই বাড়ির বাসিন্দাদের ওপর নজর রাখছিল। তাঁদের গতিবিধি, আচরণ জেএমবির মতোই। সোমবার বেলা আড়াইটায় সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যদের আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় একটি কম্পিউটার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের একটি চেকবই, একটি মোটরসাইকেল, কিছু উগ্রপন্থী বই, কিছু তার ও অন্যান্য সরঞ্জাম।

এদিকে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িটিতে পুলিশ প্রহরা চলবে বলে জানিয়েছেন রিজার্ভ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন।