ফিচার

সাতক্ষীরা জেলা আ. লীগের সম্মেলন কাল, কমিটি গঠনে নানা সমীকরণ

By Daily Satkhira

December 11, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের হাল এবার কে ধরছেনÑ এমন কৌতুহল দলে তো বটেই জেলার অন্যান্য দল এবং সাধারণন জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। রাত পোহালেই ১২ ডিসেম্বর প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদী এ কমিটি গঠনের কথা রয়েছে। এবার সভাপতি পদে নির্বাচনে আগ্রহী বেশ কয়েকজন রয়েছেন আলোচনায়। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক। বর্তমান জেলা কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক বহুলকাংখিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের স্থপতি। ২০০৪ এর ২১ অগাস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহতদের দেশে ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি এবং ৭১ এর ২৫ মার্চ পাকি বাহিনীর গণহত্যার সময় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসাবে আহতদের গোপনে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবী এবং নেতাদের গোপন আশ্রয় দেন। আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ১৯৯৬ ও ১৯৯১ এর সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর তিনি ছিলেন দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৫ পরবর্তী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় সেনা শাসকের নির্যাতনের মুখে ২২ মাস কারাভোগ করেন। ২০০২ সালে কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে হরতাল ডেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক আহবায়ক ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ সদস্য, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান। এছাড়াও আলোচনায় উঠে এসেছে ১৯৭৪ এ সাতক্ষীরা কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি, সাতক্ষীরা সদর আসনেরর বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদের নাম। তবে এই চার নেতার কেউই প্রকাশ্যে সভাপতি প্রার্থী হতে চান এমন দাবি করেননি। তারা বলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাইলেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের টানা পনের বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম এবারও সাধারণ সম্পাদকের পদে আলোচিত হচ্ছেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ এর সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা সদর আসনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন এবং ২০০৮ এর নির্বাচনে জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির অনুকূলে প্রার্থী তা প্রত্যাহার করেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এখন পর্যন্ত দুই দফায় দলের জেলা সম্পাদক। ২০১৬ সালে তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অবশ্য কাউন্সিলদের কারও কারও দাবি তিনি এবার সভাপতি হবেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আরও যারা নিজেদের নাম প্রকাশ করেছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। তিনি যশোর সিটি কলেজের ৭৪/৭৫ সংসদের ভিপি, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক, ৬৯ এ ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ৭৫ পরবর্তীতে দলের পক্ষে সাহসী ভূমিকা গ্রহণকালে নির্যাতনের শিকার, ২০১৩ সালে সাতক্ষীরায় সহিংস তা-বের বিরুদ্ধে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন । তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কয়েকবারের সভাপতি ও সাতক্ষীরার দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক। এ ছাড়া মাঠে আছেন সদর উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে বার বার গ্রেফতার ও কারা নির্যাতনের শিকার ১৯৮৫ তে জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, ১৯৮৮ তে প্রথম ও ১৯৯২ তে দ্বিতীয় বারের মতো জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও পরে জেলা যুবলীগের আহবায়ক বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শেখ সাহিদ উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা আ হ ম তারেকউদ্দিন, জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনার রশীদ। এর আগে ১৯৭০ এ তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগ সভাপতির হাল ধরেছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সৈয়দ কামাল বখত সাকি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএফএম এন্তাজ আলি। ১৯৮০ সালে ফের সৈয়দ কামাল বখত সাকি সভাপতি হন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক সাংসদ মুনসুর আহমেদ। ১৯৯৮ সালে দেবহাটা কালিগঞ্জের ভূমিহীন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমিটি বিলুপ্ত করা হলে গঠিত কমিটির আহবায়ক হন সৈয়দ কামাল বখত সাকি এমপি। ২০০০ সালের ১৫ ডিসেম্বর সৈয়দ কামাল বখত সাকি মৃত্যুবরণ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান। এরপর ২০০৪ সালের সম্মেলনে নতুন কমিটির সভাপতি হন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. নজরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুনসুর আহমেদকে ফের সভাপতি ও মো. নজরুল ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় কমিটি। এবার প্রায় পাঁচ বছর পর এবার কে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের হাল ধরবেন তা জানা যাবে ১২ ডিসেম্বর।