দেশের খবর: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গতকাল রোববার প্রকাশিত ওই তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে।
অন্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।
রাজশাহী বিভাগে স্বাধীনতাবিরোধীদের এক থেকে ১৫৪টি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব তালিকায় কয়েকশ ব্যক্তির নাম রয়েছে। যাদের কয়েকজনের নাম দ্বিতীয়বারও রয়েছে।
৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) থাকা এই পাঁচজনের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।
অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই মূলত রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন টিপু।
ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে।
এছাড়া অ্যাডভোকেট মহসিন আলী ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের নামও রয়েছে তালিকায়। তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন। ওই সময় আব্দুস সালাম পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে ভারত পালিয়েছিলেন। রাজাকারের তালিকায় নাম আসার বিষয়ে গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আমি এটা শুনে বিস্মিত হয়েছি। এটা কি করে সম্ভব? আমি জীবনে কখনো ওদের লাইনে যাইনি। রাজাকারের তালিকায় আমার নাম আসবে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এটার শক্ত প্রতিবাদ করবো।’
তালিকায় এসব ব্যক্তির নাম যেভাবেই আসুক না কেন সেটি লজ্জাজনক বলে দাবি করেছেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের সদস্য আরিফুল হক কুমার। তিনি বলেন, ‘এই তালিকায় কেন আসবে এসব ব্যক্তির নাম। যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, আবার যিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর—তার নাম কেন আসবে। হয়তো রাজাকাররা এই তালিকা তৈরিতে কাজ করেছেন।’ রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তাদের নামও যদি তালিকায় থাকে, সেটিও হবে চরম লজ্জাজনক। কেন তাদের নাম এ তালিকায় উঠে এলো, কোন প্রসঙ্গে এলে তা বিস্তারিত উল্লেখ নাই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আহম্মেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী মনে করতেন রাজাকাররা। তাহলে রাজাকার খোরশেদের করা অভিযোগ কি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে এটি হাস্যকর। যদিও আমি তালিকাটা দেখিনি।’ রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের দাবি, এ তালিকা সম্পূর্ণ নয়। এটি ওই সময়ের তালিকার একটি খসড়া হতে পারে। আবার কপি পেস্টও হতে পারে। কোনো অনুসন্ধান ছাড়ায় যাচ্ছে, তাই সেভাবেই নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু সরকার এটিকে রাজাকারের তালিকা বলছে, কাজেই এখানে কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন এ রকম ব্যক্তির নাম উঠে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। এটি মেনে নেওয়া যায় না।