দেশের খবর: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে পাকিপ্রেমীরা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। পাকিপ্রেমীরা জেলেই থাকুক, আর বিদেশেই থাকুক- তাদের ষড়যন্ত্র থাকবেই। তবে তাদের ষড়যন্ত্র এ দেশের মাটিতে কখনও সফল হতে পারে না, হতে দেব না।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এখনও মুষ্টিমেয় কিছু দালাল থাকতে পারে, কিন্তু দেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কী পেলাম বা কী পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। অর্থ নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারবে না। কিন্তু অনেকের অর্থের বড় নেশা। অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজের পরিবারকে ধ্বংস করছে, ছেলেরা বিপথে যাচ্ছে, মাদকে কিংবা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এই দুরারোগ্য ব্যাধি (অর্থলিপ্সা) থেকে মুক্ত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করলে এ দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এত বড় একটা ঘটনা (বঙ্গবন্ধু হত্যা), বাংলাদেশের কোনো লোক জানতে পারল না? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে! সেই কথা আমি এখনও ভাবি। এত বড় সংগঠন, এত নেতা- কোথায় ছিল তখন? মাঝে মাঝে আমার জানতে ইচ্ছে করে, কেউ সাহসে ভর করে এগিয়ে আসতে পারল না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যদি কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করত তাহলে দেশে বারবার ক্যু হতো না। জনগণের ওপর এত অত্যাচার হতো না। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে না পারার খেসারত জাতিকে দিতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা আলাদা হয়েছি। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে এগিয়ে থাকবে। আজ সত্যিই সেটা হয়েছে। অনেকের চেয়েই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে। এই অগ্রযাত্রা আমাদের ধরে রাখতে হবে। পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা কারও ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না। বিজয়ের মাসে আমাদের অঙ্গীকার, আমরা বিজয়ের বেশেই সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কী হবে, তলাবিহীন ঝুড়ি হয়ে থাকবে। সেই দেশে এখনও দারিদ্র্যের হার ১৮ ভাগ। আমাদের দারিদ্র্যের হার সেই দেশ থেকে একভাগ হলেও কমাব। শত ষড়যন্ত্র হলেও বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে কমিয়ে আনতে পেরেছি। দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৮ দশমিক ১৫ ভাগ। আমরা ৯০ ভাগ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে স্বলোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। বাংলাদেশ যখন সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই জাতির ওপর নেমে আসে চরম আঘাত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা, যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী বানিয়ে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুরো ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে।
তিনি বলেন, ইতিহাস সত্যকে অনুসন্ধান করে। সত্যই টিকে থাকে, মিথ্যা কখনও টিকে থাকে না- এটা আজ প্রমাণিত। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, দীর্ঘ ২১টি বছর এই ভাষণটি যারা বাজানো নিষিদ্ধ করেছিল কিংবা এটা করার পরামর্শ দিয়েছিল- তাদের এখন লজ্জাবোধ হয় কিনা?
মহান বিজয় দিবসে দলের নেতাকর্মী, দেশি-প্রবাসী সব সমর্থকসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি, পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় অর্জন করলেও আমরা মুক্তি পাই পরদিন ১৭ ডিসেম্বর।
বন্দিদশার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর আমাদেরও ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়। শেখ কামাল আগেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, আর শেখ কামাল গেরিলা কায়দায় ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ১৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের মুক্ত করা হয়। মুক্তি পেয়েই আমার মা ওই বাসায় টানানো পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। প্র
ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে! মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস একাকী তিনি (বঙ্গবন্ধু) পাকিস্তান কারাগারে বন্দি। একটি বৈরী পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া। সেখানে যেমন গরম, তেমন শীত। তাকে কিভাবে রেখেছিল? কি খেতে দিয়েছিল? যাকে তারা (পাকিস্তানি) ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল, তাকে তারা কত কষ্ট দিতে পারে- সেটা কল্পনাও করা যায় না। তবে বঙ্গবন্ধুর ভেতর যে আÍবিশ্বাস ছিল, সেটাই তাকে দৃঢ় করে রেখেছিল। ফলে এত কষ্টের পরও বেঁচে ছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে এসে ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন।’
আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়েছিলেন। তিনি প্রতিটি কাজের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে সপরিবারে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল। আমার মেজ ফুপু, ছোট ফুপু সব বাড়িতেই তারা হানা দিয়ে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় সভায় কবিতা আবৃত্তি করেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা।