জাতীয়

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে সারাদেশ

By Daily Satkhira

December 20, 2019

দেশের খবর: হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে প্রায় সারা দেশ। বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ছে। এই কুয়াশার সঙ্গে দেশের সাতটি জেলা রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা থাকতে পারে আরও দুই দিন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পাশাপাশি কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঠাণ্ডায় বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগতে দেখা যাচ্ছে।

ঘন কুয়াশার কারণে দুই দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় সূর্যের আলো ভূমিতে পৌঁছাচ্ছে না। এর ফলে তাপমাত্রা দুই দিনের ব্যবধানে চার থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে। তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, আবার মাঠের ফসলের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে ঘন কুয়াশা।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বছরের এই সময়টায় সাইবেরিয়া থেকে আসা হিমেল হাওয়া হিমালয়ে বাধা পায়। ওই হিমেল বাতাসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসের মিশ্রণ হয়। এতে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প তৈরি হয়। এই জলীয় বাষ্পই কুয়াশা হয়ে নেপাল থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ শুক্রবারের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার দাপট দেশের আরও কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়ে শীতের দাপট আরও বাড়তে পারে। শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও নদীতীরবর্তী এলাকায় ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দেশের সড়ক ও নৌপথে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মাঠে থাকা বোরো ধানের বীজতলা, আলু ও সরিষার চারা কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় ও তাপমাত্রা কমে আসায় রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ প্রধান শহরের বায়ু দূষণ পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। গতকাল সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় রাজধানীর বায়ু মানবদেহের জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল। বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ ছিল রাজধানীর মিরপুর এলাকায়। আর তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল নর্দা এলাকায়।

বৈশ্বিকভাবে বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা ছিল বিশ্বের তৃতীয় দূষিত বায়ুর শহর। প্রথম স্থানে ছিল ভারতের দিল্লি, দ্বিতীয় স্থানটি ছিল পাকিস্তানের লাহোরের। চতুর্থ স্থানে ছিল মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর। এক মাসের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ দিন (দিনের বেশির ভাগ সময়) ঢাকা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত বুধবার ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর ও কুমিল্লা শহরের বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় শীতের অনুভূতি আগামী দু-তিন দিন বেশি থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রাজশাহী, ঈশ্বরদী, কুড়িগ্রাম ও যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। এসব এলাকায় তীব্র শীতের দাপটে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

এদিকে মাঠের ফসল রক্ষায় কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে ও রাতে সেচ দিয়ে ভোরে সেই পানি সরিয়ে ফেলতে। এ ধরনের আবহাওয়ায় ধানে পোকার আক্রমণ ও আলুতে রোগ দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।