নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের সংস্কার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। শুক্রবার সকালে মন্দিরের সীমানা নির্ধারণ শেষে প্রাচীর সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধর্মদাস মিস্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক তপন মণ্ডল জানান, ১৬৯৬ সালে জমিদার যতীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী সাবেক ১, ১৫৮,২৬৭ ও ৩৬৯ খতিয়ানের প্রত্যেকটি খতিয়ান থেকে ছয় শতক করে ৩০২৪ দাগে ২৪ শতক জমি দান করে তাতে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া, বুড়োখারাটি, লাঙ্গলদাড়িয়া, গাজীপুর, কাঁকড়াবুনিয়া, মহিষকুড়, কলিমাখালি, ঢালীরচক, বিলবকচর, বিলথানাঘাটা, বিল বুড়োখারাটি, বিলমহিষ্কুড়সহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের হিন্দুরা এ মন্দিরে প্রতি বাংলা সনের চৈত্রমাসের শেষ মঙ্গলবার কালীপুজা উপলক্ষ্যে আনন্দে মেতে ওঠে। পুজা মূলত পরিণত হয় সর্বধর্মেরমিলন মেলায়। এ ছাড়াও সেখানে হরিপুজা, শীতলা পুজা, নামযজ্ঞ, বিশ্বকর্মা পুজা, মণষা পুজা ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার শত্র“ সম্পত্তি আইনপাস করায় ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসায় নাকতাড়াসহ এলাকার বর্ধিষ্ণু হিন্দুরা এক শ্রেণীর মৌলবাদি সংখ্যাগুরুদের অত্যাচারের দেশ ছেড়ে চলে বাধ্য হন। ফলে তাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, বাস্তুভিটা, মন্দির, শ্মশান জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বেদখল হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের জমি খাস করে বা পেরিফেরি করে তার উপর গড়ে ওঠে হাট, বাজার, খেলার মাঠ ও রাস্তা। জমি উদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদী মামলার খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। এক বিঘা জমি উদ্ধারে খরচ হয়ে যায় আরো এক বিঘা জমির দাম। নাকতাড়া শ্রী শ্রী কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন মণ্ডল আরো বলেন,কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের নামে রেকডীয় জমি ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি ০২/২০১০ নং কেসের মাধ্যমে ২৪ শতক জমি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে বলে ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে তারা জানতে পারেন। ওই সালেই তৎকালিন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল ওই বছরের ২১ মার্চ বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তার নামে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে মামলা(দেঃ ৩৩/১১) করেন। স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রি ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক ওই মন্দির সংস্কারের জন্য জিএসআইডিবি প্রকল্পের আওতাধীন কাজে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ করেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ওই কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় আট বছর পর চলতি বছরের ১৭ জুন আশাশুনি সহকারি জজ আদালতের বিচারক সাবরিনা চৌধুরী কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের জমি পেরিফেরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে ওই জমি দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করে মন্দিরের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১১ সালে মন্দিরের জমি জবর দখল করে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন খালেক সরদার। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরদিন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের সহায়তায় বিরোধপূর্ণ জমির পূর্ব পাশে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের জন্য ঘর নির্মাণ হয়। বাধা দেওয়ায় মোটর সাইকেলে চালক আশাশুনির ফেরদৌস, নাকতাড়া এলাকার মতলেব, আলমগীর হোসেন ও জুলফিকারসহ কয়েকজন মন্দির ভাঙচুর করার হুমকি দেন। পরবর্তীতে ওই ঘরের পাশে খোলা জায়গায় প্রসাবখানা বানিয়ে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা অব্যহত থাকে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও চেয়ারম্যানের কারসাজিতে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। এমনকি ২০১৭ সালে চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল মন্দিরের জমির উপর দিয়েই রেডিয়েন্স এণ্ড ফ্রেণ্ডশিপ ক্লাবে যাওয়ার জন্য ইট সোলিং রাস্তা বানিয়ে দেন। একপর্যায়ে আদালতের রায় অনুযায়ি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি হিন্দু সংগঠণের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্দির সংস্কারের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারন ও প্রাচীর সংস্কারারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জয়মহাপ্রভু সেবক সংঘের সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, জেলা মন্দির সমিতির সাংগঠণিক সম্পাদক প্রাণনাথ দাস, মাইনরিটি হিউম্যান রাইটস মিডিয়া ডিফেণ্ডার ফোরামের সভাপতি রঘুনাথ খাঁ, যুব কমিটি ও হিন্দু মহাজোটের নেতা ডাঃ অসীম মণ্ডল ও মিলন বিশ্বাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের আশাশুনি শাখার সম্পাদক দীপঙ্কর মণ্ডলসহ কালী মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ।