বিদেশের খবর: ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি ফাতো বেনসুদা। তিনি বলেছেন, এই তদন্তের পর জাতিমুক্তি আন্দোলনের সংগঠন হামাসসহ ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যেতে পারে। আশা করা হচ্ছে, তাদের উভয়ের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করা হবে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আইসিসির নেওয়া পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে তেল আবিব। আর আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্যোগকে ইতিবাচক পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বেনসুদা বলেন, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে এই তদন্তের অনুরোধ করায় এটা শুরু করার জন্য বিচারকদের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। তবে কোন ভূতাত্ত্বিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে তদন্ত করবে পারবে প্রতিনিধি দল সে ব্যাপারে আইসিসি’র প্রাক-বিচার (প্রি-ট্রায়াল) চেম্বারের কাছে রুল আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে আইসিসির তদন্তের ঘোষণার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটি আইসিসির সদস্য না হওয়ায় তিনি দাবি করেন, ‘এমনটা করার কোনও এখতিয়ার এই আদালতের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা সত্য ও ন্যায়বিচারের জন্য একটি কালো দিন। এটা ভিত্তিহীন এবং গর্হিত সিদ্ধান্ত।’
ইসরায়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের কারসাজির মাধ্যমে কৌঁসুলিকে প্রভাবিত করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। এই রাজনৈতিক ইস্যুকে আইনি বিষয় তৈরির চেষ্টা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের পথে মারাত্মক বাধা।’
অন্যদিকে আইসিসির এই উদ্যোগকে ‘একটি ইতিবাচক সাহসী পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের নেতারা।
তদন্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের আশঙ্কায় শুক্রবার ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল একটি আইনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, গাজা বা পশ্চিম তীরে বিচারের এখতিয়ার নেই আইসিসির।
আইন অনুযায়ী কেবল সার্বভৌম রাষ্ট্রের পরিস্থিতির বিচার করতে পারে আইসিসি। আর তেল আবিব দাবি করে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বৈধ অধিকার রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের ওই দাবি মানে না। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃত নয়, তারপরও দেশটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইসিসি সদস্য হয়। একারণে তারা যেকোনও যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতকে অনুরোধ করতে পারে।
শুক্রবার ফাতো বেনসুদা বলেছেন, এটা শুধু ইসরায়েলের কার্যক্রম তদন্তে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তারা গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডও তদন্ত করবে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগঠনের নেতা হানান আশরাই বলেছেন, ‘এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য মূল্য দিতে হবে। ফিলিস্তিনিরা সার্বজনীন মানবাধিকার থেকে বাদ পড়তে পারে না।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও আইসিসির এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। তবে সংগঠনগুলো তদন্ত জোরদার দ্রুত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতি আহ্বান জানায়।