যশোর

ডাকসুতে হামলা, আহত তুহিন ফারাবি লাইফ সাপোর্টে

By Daily Satkhira

December 23, 2019

দেশের খবর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিতরে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলায় আহত তুহিন ফারাবি (২৫) নামের একজনকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসক মাহবুব মোর্শেদ রোববার রাতে বলেন, ‘তুহিনের খিঁচুনি হচ্ছিল। তাই তাকে জেনারেল আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে তার খিঁচুনি হচ্ছিল তা এখনি বলা যাচ্ছে না। আঘাতের কারণে এই খিঁচুনি হচ্ছে, নাকি আগে থেকেই খিঁচুনি ছিল তা আরো পরে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানা যাবে।’

তুহিন ফারাবি রাজধানীর চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নোয়াখালী সোনাইমুড়ি উপজেলায়। এছাড়া ফারাবি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের- সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক।

রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীদের হামলায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও তার সঙ্গে থাকা অন্তত ২৪ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তারা হলেন—ভিপি নুরুল হক, তার ছোট ভাই আমিনুর ও নুরুল হকের ঘনিষ্ঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এপিএম সোহেল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের আবাসিক সার্জন মো. আলাউদ্দিন বলেন, আহত তুহিন ফারাবির অবস্থা সংকটাপন্ন। তার শরীরে খিচুনি হচ্ছে। তিনজন জরুরি বিভাগের আইসিইউতে রয়েছেন। বাকি ২০ জনকে জরুরি বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।

রোববার দুপুর ১২টায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। সংগঠনটি মিছিল করে ডাকসু ভবনের দিকে আসে। এ সময় ভিপি নুরুল ২০/২৫ জনকে নিয়ে ডাকসু ভবনে প্রবেশ করছিলেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তারপর নুরুল তার লোকদের নিয়ে ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে চলে যান। এর মধ্যেই ডাকসু ভবনের সামনে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজীত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং তাঁদের অনুসারীরা। দুটি সংগঠনের কর্মীরা তখন ডাকসু ভবনের দিকে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় নুরুলের নির্দেশে ডাকসু ভবনের কর্মীরা ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। সাদ্দাম হোসেন একপর্যায়ে বাইরে থাকা নিজ সংগঠনের ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। কোনো ধরনের হামলা মারামারি করতে নিষেধ করেন। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসেন।

ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন নিজেও ডাকসুর এজিএস। তিনি গেটের সামনে এলে ডাকসুর কর্মীরা গেট খুলে দেন। তখন সাদ্দাম, সনজীতের এবং মঞ্চের কর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা সরাসরি নুরুলের কক্ষে ঢোকেন। নুরুল কেন বহিরাগত নিয়ে ডাকসুতে এসেছেন তা জানতে চান সাদ্দাম হো্সাইন। তখন নুরুল বলেন, তিনি সব সময় হামলার আশঙ্কার মধ্যে থাকেন। এ কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য অনেককে সঙ্গে রাখেন। একপর্যায়ে নুরুল সনজীতকে বলেন, ‘আপনি তো ডাকসুর কেউ না। আপনি কেন এখানে এসেছেন।’ সনজীত তখন বলেন, ‘আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরেই বুঝবি।’

কথোপকথনের মধ্যেই নুরুলের সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের দুই নেতার সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা। এরপর এই দুই নেতা সেখান থেকে চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর নুরুল ও অন্যদের ওপর হামলা শুরু হয়। একপর্যায়ে নরুল ও তার সঙ্গীরা ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে আত্মরক্ষার জন্য সেখানেই অবস্থান করেন। পরে প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর এসে তাদের উদ্ধার করে সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। নুরুল হক ছাড়া আহত অন্যরা হলেন কবি নজরুল কলেজের ছাত্র রুকমিয়া হোসেন রাজ, গোলাম কিবরিয়া, জাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মশিউর রহমান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দীন বলেন, প্রায় ২৫ জনের মতো হাসপাতালে এসেছিল। পাঁচ থেকে সাত জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তাদের এক্সরে ও সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। ভোঁতা কিছু দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আজ সোমবার দুপুরে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ডেকেছে। রোববার সন্ধ্যায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সংবাদ সম্মেলেন বলেন, সোমবার দুপুরে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। হামলার প্রতিবাদে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ছাত্র সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা। আহতদের অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে আবার অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি তার।