মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে আগেই প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়েছিলেন সাকিব-মুস্তাফিজরা। বৃহস্পতিবার ২২ গজে শেষ টি-টোয়েন্টিতে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার প্রমাণ দিয়ে রাখলেন তারা। কলম্বোতে ব্যাট-বলে অসাধারণ নৈপুণ্যে দেখিয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ৪৫ রানে জিতেছে সফরকারীরা। ফলে পুরো সফরে বাকি ফরম্যাটের মতো এই সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করলো টিম বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ।
১৭৭ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে আশানুরূপ কিছু করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসানের শুরুর ওভারে দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন আগের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা কুশল পেরেরা (৪)।তৃতীয় ওভারে ফেরেন মুনাবিরা (৪)। এরপর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশের বোলিং তোপে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা।যদিও মাঝে রানের গতি বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা। ব্যক্তিগত ২৩ রানে তাকেও মিরাজের তালুবন্দী করান মাহমুদউল্লাহ। ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের বলেই পর পর দুই হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। বিদায় নেন গুনারত্নে ও সিরিবর্ধনে। তবে এই জুটিতে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৮ রান যোগ করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন থিসারা পেরেরা ও কাপুগেদেরা। দলীয় ৯৮ রানে পেরেরাকে স্টাম্পড করে সেই শুরুর মতোই লঙ্কান ভিতকে ফের নাড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান। পেরেরা ফেরেন ২৭ রানে। মাঝে কিছু বিরতি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মাশারাফি। ফিল্ডিংয়ে কিছু সুযোগ মিস করলে বল দিয়ে তা পুষিয়ে দিয়েছেন। বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান সেকুগে প্রসন্নকে (১১)। পরের ওভারে মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হুমকি হয়ে দাঁড়ানো কাপুগেদেরা। ৩৫ বলে ৫০ রানে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এই উইকেটের মধ্য দিয়েই প্রতিরোধের দেয়াল ভাঙে শ্রীলঙ্কার। এই ওভারেই ফেরেন লাসিথ মালিঙ্গা। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা থামে ১৩১ রানে।
এর আগে শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেছিলেন দুই ওপেনার ইমরুল ও সৌম্য। কিন্তু শেষ দিকে লাসিথ মালিঙ্গার হ্যাটট্রিকে বড় সংগ্রহ পায়নি সফরকারীরা। বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে ১৭৬ রান।
টস জিতে খেলতে নেমে শুরুতেই আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। তামিমের চোটে দলে ঢুকেন ইমরুল। আর খেলতে নেমেই তেরে ফুড়ে মারতে থাকেন। সঙ্গী হিসেবে সৌম্য সরকার তো ছিলেনই। তবে শুরুর দিকে স্বাচ্ছেন্দ্যে ছিলেন না তেমন একটা। তাদের দুজনের ব্যাটে ভর করে ৫ ওভারেই ৫০-এর কোটা ছাড়ায় সফরকারীরা। পাওয়ার প্লের পুরো ফায়দাটাই নিয়ে নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে সপ্তম ওভারে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেননি সৌম্য। গুনারত্নের বলে সরাসরি তার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে সৌম্যর স্কোর ছিল ১৭ বলে ৩৪ রান। যাতে ছিল ৪ চার ও ২ ছয়। পরের ওভারে ফিরে যান ইমরুল কায়েসও। প্রসন্নর বলে দ্রুতগতিতে রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান ইমরুল। ২৫ বলে ৩৬ রান করেই বিদায় নেন তিনি। যাতে ছিল ৪ চার ও একটি ছয়।
দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা ছন্দ হারালেও সেই ছন্দে বাড়তি গতি আনেন সাকিব ও সাব্বির। তাদের ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারেই ১০০ রান ছাড়ায় সফরকারীরা। সাকিব এবার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের নেতৃত্ব দিলেও সাব্বিরও ব্যাট চালিয়েছেন সমান তালে। তবে ১৩.১ ওভারে সঞ্জয়ার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন সাব্বির (১৯)। এরপরেই রান রেট কমে যায় সফরকারীদের। আর তাতেই ১৬তম ওভারে কুলাসেকারার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। ততক্ষণে তার স্কোর ছিল ৩১ বলে ৩৮ রান। এক ওভার বিরতি দিয়ে ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। এরপরেই রং হারায় বাংলাদেশের ইনিংস। শুরুর সেই রং শেষ দিকে হয় বিবর্ণ। মালিঙ্গার হ্যাটট্রিকে একে একে ফেরেন মুশফিকুর, মাশরাফি ও মিরাজ। নিজের বিদায়ী টি-টোয়েন্টিতে শূন্য রানে ফেরেন মাশরাফি। আর লাসিথ মালিঙ্গা অর্জন করেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের আরেকটি হ্যাটট্রিক। এর আগে ১৮তম ওভারে এবার পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৭ রানে ব্যাট করতে থাকা মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৭৬ রান। শেষ ৩০ বলে আসে ৪০ রান। ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বৃহস্পতিবার কলম্বোতে সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলছেন বাংলাদেশের সীমিত ওভারের অধিনায়ক।