রাজনীতি

সাতক্ষীরায় যুদ্ধাপরাধী পরিবারের প্রতি গভীর প্রেম! সাময়িক বরখাস্ত হয়েও পূর্ণাঙ্গ বেতন পাচ্ছেন খালেক মন্ডল পুত্র !

By Daily Satkhira

April 09, 2017

আমির হোসেন খান চৌধুরী: সাতক্ষীরা জেলা জামাতের আমির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মন্ডল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার চলছে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের দায়ে। তার দ্বিতীয় পুত্র শামীম হাসান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের ইসলামের ইতহাসের প্রভাষক। এই শামীম বর্তমানে সাময়িকভাবে বরখাস্ত। বিধি অনুযায়ী তার প্রতিমাসে বেতনের অর্ধেক অর্থ পাওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ উত্তোলিত মাস পর্যন্ত তাকে পূর্ণাঙ্গ বেতন-ভাতা দিয়ে আসছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা নিয়েই যে সরকারের অবস্থান, প্রচলিত আইন, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা হয়েছেÑ তা বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়। উল্লেখ্য, কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি। আমাদের হাতে আসা ভালুকা চাঁদপুর কলেজের ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মান্থলি পে অর্ডার(কলেজ কর্তৃক ব্যাংকে পাঠানো)-এর অনুলিপিতে দেখা যাচ্ছে- ১২ নং সিরিয়ালের ৪২৪৯৩৩ নং ইনডেস্কধারী সহকারী অধ্যাপক এস এম সহিদুর রহমানকে তার বেতন, ঘরভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ প্রাপ্য ৩৭০০০ টাকার বিপরীতে ওয়েল ফেয়ার ও অবসর কর্তনের পর ৩৪,৮৭০টাকা, ২৫নং সিরিয়ালের ৩০০০১৯০ ইনডেস্কধারী প্রভাষক শামীম হাসান(যুদ্ধাপরাধী খালেক মন্ডলের পুত্র)-কে তার বেতন, ঘরভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ প্রাপ্য ৩০,৫০০টাকার বিপরীতে ওয়েল ফেয়ার ও অবসর কর্তনের পর ২৮৭৬০টাকা এবং ৩২ নং সিরিয়ালের ৪২৭৩৮৩ নং ইনডেস্কধারী সহকারী লাইব্রেরিয়ান এস এম মহিবুল্লাহকে তার বেতন, ঘরভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাবদ প্রাপ্য ২৩৫০০টাকার বিপরীতে ওয়েল ফেয়ার ও অবসর কর্তনের পর ২২১৮০ টাকা বিল করে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। দুই পৃষ্ঠার ওই বিলের প্রতি পৃষ্ঠায় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজন কুমার মিত্রের সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। ইতিপূর্বে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্তই রয়েছে তাদেরকে শুধুমাত্র খোরাকি ভাতা বাবদ বেতনের অংশ প্রদানের। জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নিয়মিত আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত হয় নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা যেসকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে আছে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করার  জন্য। এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কলেজ প্রশাসন তড়িঘড়ি খালেক মন্ডল পুত্রকে এত দিনে উত্তোলিত অর্থের অর্ধেক কলেজ ফান্ডে জমা দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়। প্রভাষক শামীম হাসান একই দিনে গত বুধবার প্রায় ৪৪২৫০৫টাকা কলেজের কোন একটি হিসাবে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজে সদ্য যোগদানকারী অধ্যক্ষ মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি। এখনও কলেজের সব কাগজপত্র বুঝে না পাওয়ায় শামীম হাসান কত মাসের অতিরিক্ত অর্থ জমা দিয়েছেন তা বলতে পারছেন না বলে জানান। অন্যদিকে, শামীম হাসানকে কিভাবে তিনি পূর্ণাঙ্গ বেতন তুলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কলেজ পরিচালনা পরিষদ যেভাবে বলেছে আমি তেমনটিই করেছি। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।” চাঁদপুর কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা জামাত নেতা মুরাদুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কলেজ সংক্রান্ত কোন প্রশ্নের উত্তর দেবেন না বলে জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত চাঁদপুর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে বিজন কুমার মিত্রের নিকট শামীম হাসানসহ কলেজের আরও একজন শিক্ষক ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান নাশকতা মামলায় আটক হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বহিস্কার হলেও কিভাবে পূর্ণাঙ্গ বেতন তুলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি খেয়াল করেননি। উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা থানার নাশকতার মামলা নং-৭৮, তাং ২৭/০৮/২০১৩ এর আসামি হয়ে জেল হাজতে আটক থাকায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৮ অগাস্ট ২০১৩ সাল থেকে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় তাকে খোরাকি ভাতা প্রদান সাপেক্ষে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইভাবে ওই কলেজের সহকারী লাইব্রেরিয়ান এস এম মহিবুল্লাহকে আশাশুনি থানার নাশকতা মামলা নং-০২, তাং-০৫/১২/২০১৩ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্তÍ খোরাকি ভাতা প্রদান সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্ত করে কলেক পরিচালনা পরিষদ। পরিচালনা পরিষদের এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ৭মার্চ ২০১৬ তারিখে। একই সভায় কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম সহিদুর রহমানকেও সাতক্ষীরা সদর থানার একটি বিস্ফোরক মামলা যার নং-২৩, তাং-১৯/১১/২০১৫ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খোরাকি ভাতা প্রদান সাপেক্ষে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই তিন সাময়িকভাবে বহিস্কার হওয়া নাশকতা মামলায় আটক হয়ে জেলখাটা আসামিরা যথারীতি পূর্ণাঙ্গ বেতন পেয়ে এসেছেন মাসের পর মাস। এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী খালেক মন্ডলের পুত্র শামীম হাসান এই বেতন পেয়ে আসছেন বছরের পর বছর! একদিকে, বর্তমান সরকার যখন দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ইষ্পাত কঠিন দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তখনই তার দলের একটি অংশ সাতক্ষীরাতে এভাবে কখনও গোপনে কখনও প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার, তাদের প্রতিষ্ঠান, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের কাউকে কাউকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করছেন! এঘটনায় রীতিমত বিস্মিত সবাই। সচেতন মহল মনে করে বিপুল অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও নাশকতাকারীদের পক্ষে সরকারের যে বা যারা গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে চিহ্ণিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।