আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসমাউল হুসাইনের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় মামলা হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর উন্নয়ন আশাশুনির সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাবের হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর আসামীরা হলেন, আশাশুনির হারান সরদারের ছেলে সেলিম রেজা (২৮), একই এলাকার ছট্টুর সরদারের ছেলে গুটি রানা (২৯), আব্দুল বারীর ছেলে জয়নাল (২৭), মৃত তাওহিদ আলম লাভলুর ছেলে জেনিথ (২৬), মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে আল আমিন হোসেন (২৭)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জন। মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ২৯ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে আশাশুনির মাদারদিঘী নামক স্থানে ট্রেনিং সেন্টারের পাশে আসামীরা বাদীকে আটকিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। বাদী টাকা চাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে আসামীরা তাকে বেদমভাবে কিল চড় ঘুষি মারে। পরে তাকে একটি গাড়িতে করে আশাশুনি হাফিজিয়া মাদ্রসার পাশে নিয়ে যায় এবং সেখানেও মারপিট করে। একপর্যায়ে বাদী জীবন বাঁচাতে তার সহকর্মী তানভির রেজাকে মোবাইলে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং আসামী আসমাউলের হাতে দেয়। এরপর তানভিরকেও আটকিয়ে আরো ৮০ হাজার টাকা দাবী করে। একপর্যায়ে বাদী তার মোবাইল থেকে দুই দফায় ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা দেয় আসামীদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে। আসামীরা বাদীর কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয় এবং সকালে বাকী ৫৫ হাজার টাকা নিলে স্ট্যাম্প ফেরৎ দিবে, নইলে বাদীর ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি আসামীদের দিতে হবে বলে শর্ত দেয়। বাদী আসামীদেরকে চেক দিতে চাইলে তাকেসহ তানভিরকে বাদীর ভাড়াবাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে বাদী ডাক চিৎকার শুরু করলে আসামীরা চলে যায়। এলাকাবাসী বাদীকে তাৎক্ষণিক আশাশুনি হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে আলোচিত জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদক ও পর্ণোগ্রাফি আইনে অর্ধডজন মামলা। সাদিককে বহিস্কারের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয় দখলবাঁজ, মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী আসমাউল হুসাইন। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে সীমাহীন অভিযোগ। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক আর কমিটি গঠনের নামে চাঁদা আদায় এসব ঘটনা আশাশুনি উপজেলাবাসির মুখে মুখে শোনা যায়। তবে ক্ষমতাসীন কোনো এক নেতার ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা, মুক্তিপণ আদায় এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। পকেট কমিটি করে রোজ টাকা আদায়, টাকা দিতে না পারলে আবার কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার অভিযোগ পুরনো কথা। আসমাউলের এ বাণিজ্য শুধু ছাত্রলীগের কমিটি গঠন ও চাঁদাবাজিতে শেষ নয়, উপজেলা সরকারি দপ্তরগুলোতে পদচারণা ছাত্রলীগ সভাপতি আসমাউল হুসাইনের। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবসময় থাকে আতঙ্কগ্রস্ত। টাকা না দিলে যে শুধু মারধর করে তা নয়, তুলে নিয়ে যায়। আসমাউলের বাড়ি সদর ইউনিয়নে হওয়ায় সে সদর কেন্দ্রিক যতগুলো বে-সরকারি সংস্থা রয়েছে সেসব অফিসেও তার পদচারণা। তবে দল কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজির ভোল্ট পাল্টিয়ে ফেলেছে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগর বিবাহিত ও মাদকাসক্ত সভাপতি আসমাউল হুসাইন। সরাসরি এখন আর সে বিভিন্ন অফিসে না গিয়ে, তার সাথে যেসব দেহরক্ষী থাকে তাদের পাঠায়। তাদের দিয়ে চলে তার চাঁদাবাজির ব্যবসা। আর পরিমাণে বেশি হলে সরাসরি নিজেই মাঠে নেমে যান আসমাউল। ফেন্সিডিল সেবন তার নৈমিত্তিক ব্যাপার। আসমাউলের মাদক হাতে মাদকের একটি ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ছবির বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সভাপতি আসমাউল হুসাইন বলেন, আমাকে ব্লাকমেইল করে ছবিটি তুলেছিল জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। যদিও এলাকার অধিকাংশ মানুষ জানায় আসমাউল মাদকাসক্ত। জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাদিকের মতই আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসমাউল হুসাইনের রাজনৈতিক উত্থান হঠাৎ করেই হয়েছে। পারিবারিকভাবে তার বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। দিনমজুরের কাজ করে দিন আনে দিন খায়। এরকম অবস্থা ছিলো আসমাউলের আগে। তবে বর্তমানে রাজার হালে চলছে আসমাউল। কোন কিছু না করেই ইতোমধ্যেই আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বউ, মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে আশাশুনি থানা পুলিশের এক সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আসমাউল। আসমাউলে বিরুদ্ধে মানুষকে ব্লাককমেইল করে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে, টাকা মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, আশাশুনি উপজেলাব্যাপী সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি বিভিন্ন রকম অপকর্ম কর্মকাণ্ড করে দাপিয়ে বেড়ায় আসমাউল। কিন্তু মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না অনেকেই।