আজকের সেরা

বিদায় ২০১৯; ডেঙ্গু ফণি বুলবুল বজ্র আর শৈত্য আতংকে সাতক্ষীরা

By Daily Satkhira

January 02, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরের মধ্য সময়ে ডেঙ্গুর দাপটে অস্থির হয়ে উঠেছিল সাতক্ষীরা। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসতে থাকে রোগীর পর রোগী। তাদের পরিক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে হিমসিম খেতে হয় সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগকে। মাসব্যাপী চলে মশা নিধন অভিযান। কয়েক হাজার মানুষের চিকিৎসা গ্রহনের পাশাপাশি এক হাজারেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও সাতক্ষীরায় কেউ মারা যাননি। তবে খুলনায় রেফার করার পর মৃত্যু ঘটে চারজনের। এরা হলেন কালিগঞ্জের শ্রীকলার মাদ্রাসা ছাত্র আলমগীর, সদরের কালিয়ানি ছয়ঘরিয়ার শাহানারা খাতুন, কলারোয়ার সোনাবাড়িয়ার রহিমা খাতুন ও তালা সদরের রহিমা বেগম। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ফণির হানা নিয়ে আতংকিত ছিল সাতক্ষীরাবাসী। তটস্থ ছিল জেলা প্রশাসন। অবশেষে জেলাবাসী খুঁজে না পেলেও চোখ রাঙ্গানো ফণি কেবলমাত্র বাতাস আর বৃষ্টি ঢেলে দিয়ে পালিয়ে যায় সাতক্ষীরা থেকে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপট গত নভেম্বরে সাতক্ষীরাকে কাঁপিয়ে তোলে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও বুলবুলের আঘাতের আগে অঝোরে বৃষ্টি জনমনে আতংক আরও বাড়িয়ে দেয়। উপকূল জুড়ে শুরু হয় সিডর আর আইলার দুঃসহ স্মৃতির আতংক। বাড়িঘর ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নেয় সাইক্লোন শেল্টারে। অবশেষে ৯ নভেম্বর গভীর রাতে প্রবল শক্তি নিয়ে বুলবুল হানা দেয় সুন্দরবনে। সুন্দরবনের পাল্টা আঘাতে দুর্বল বুলবুল পালাতে থাকে সাতক্ষীরার উত্তর দক্ষিন জনপদে। বৃষ্টি আর বাতাসে ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাড়ি ঘর, গাছপালা। এরপর দু’দিন ধরে পানি ঢেলে বিদায় নেয় বুলবুল। তবে ফণি বা বুলবুল কোনো প্রাণহানি ঘটাতে না পারাটাই ছিল জেলাবাসীর স্বস্তির বিষয়। বিদায়ী বছরে ঘন ঘন বজ্রপাতে সাতক্ষীরায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ১২ টি। কলারোয়ার চন্দনপুরে ২৫ ফেব্রুয়ারি জামসেদ আলি নামের এক বৃদ্ধ কৃষক বজ্রপাতে মারা যান। ২৮ জুন কালিগঞ্জের রতনপুরে বজ্রপাতের সময় একটি টিনশেড ঘরে আশ্রয় নেওয়া তিন ভাইবোন আল আমিন, সাবিনা খাতুন ও রবিউল ইসলাম বজ্রপাতে নিহত হবার ঘটনা ছিল মর্মান্তিক। একই দিনে বজ্রপাতে মারা যান কালিগঞ্জের জিয়ানগরের মুনসুর আলি ও আশাশুনির মাদরার জুয়েল হোসেন। পরদিন ২৯ জুন বজ্রপাতে খেজুরডাঙ্গি গ্রামে মারা যান অষ্টমী সরকার ও বলাডাঙ্গা গ্রামের জেসমিন নাহার। ১২ জুলাই তালার তৈলকুপি গ্রামের এক কিশোরী বজ্রপাতে আহত হয়। ২৪ আগস্ট কলারোয়ার জালালাবাদ মাঠে ক্ষেতে আমন চারা রোপনের সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারান দেলবার হোসেন। এ সময় দগ্ধ হন মিলন হোসেন। এ ছাড়া ২৭ আগস্ট কলারোয়ায় আরও একজন প্রাণ হারান বজ্রপাতে। ডিসেম্বরের শেষভাগে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৮ প্রবীণের মৃত্যু ছিল হৃদয়স্পর্শী। বার্ধক্যজনিত নানা ব্যাধির সাথে শীতের তীব্রতা তাদের মৃত্যুকে ত্বরাণি¦ত করে। এরা হলেন জরিনা খাতুন ৭০, খয়রাত আলি ৭৫,আবদুল গাজি ৭০,লুৎফর গাজি ৭০,রউফ গাজি ৯০,হামিদ গাজি ৭৬,ভাদ্রী মন্ডল ৪৫ ও মাহিদা বেগম ৭৫। এ ছাড়া তালার মাদরা গ্রামে শীতের কাঁপুনিতে মারা যান গোবিন্দ মন্ডল ৭০। বিদায়ী বছরে সাতক্ষীরা সীমান্ত পথে ভারতে পাচারকালে স্বর্ণ আটকের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ২ জানুয়ারি মনিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার অসীম নামের এক ব্যক্তি ৮ টি স্বর্ণের বার নিয়ে সাতক্ষীরা অভিমুখে আসছিলেন। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা পাটকেলঘাটা থানার এএসআই মামুন ও কলারোয়া থানার এএসআই ইসহাক যশোরের নাভারণ মোড় থেকে তা কেড়ে নেন। এ ঘটনায় শার্শা থানায় আটক হন ওই দুই পুলিশ অফিসার। ২৯ জানুয়ারি কাকডাঙ্গা সীমান্তে আড়াই কেজি ওজনের ১৮ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে বিজিবি। ১০ আগস্ট ভোমরায় মঞ্জুরুল নামের এক ভ্যান চালক ১০ পিস স্বর্ণসহ আটক হয়। ৩ অক্টোবর ৮ টি সোনার বারসহ আলম নামের এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয় লক্ষ্মীদাঁড়ি সীমান্তে। ২২ নভেম্বর ৪ কজি ৬৭০ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয় কাকডাঙ্গা সীমান্তে। এ সময় দুই চোরাচালানি পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর ভোমরায় সজীব হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ৬৭০ গ্রাম স্বর্ণসহ গ্রেফতার করে বিজিবি। বছরের প্রথম ভাগে সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগের ক্রয় দুর্নীতি ছিল বহুল চর্চিত বিষয়। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে লুটপাট ও ওষুধ পুঁতে রাখার ঘটনা ছিল বহুল আলোচিত। তুমুল নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে এসব কিছু ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বছরের শেষভাগে জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের দুই সহযোগী ক্রসফায়ারে নিহত হয় এবং আটক করা হয় বহু অপকর্মের হোতা সাদিককে। যা এখনও আলোচিত হচ্ছে জেলাব্যাপী। তবে এতোসব আতংকের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে সৌম্য সরকার ও মুস্তাফিজের বিশ^জোড়া মাঠ কাঁপানো পারফরমেন্স ছাড়াও জেলাবাসীর কাছে সুখবর ছিল মুস্তাফিজের বিয়ে। ২২ মার্চ দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুরের কনে মামাতো বোন ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া পারভিন শিমুর সাথে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ক্রিকেট বিষ্ময় বাঁ হাতি পেসার ফিজ খ্যাত মুস্তাফিজ। ২৩ জুলাই নববধূকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মুস্তাফিজের গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জের তেঁতুলিয়ায়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় বৌভাত।