নিজস্ব প্রতিনিধি : সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আমানাত সংগ্রহ করছে আল-কারিম ফাউন্ডেশন নামের একটি ভুইফোড় প্রতিষ্ঠিান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নাম ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন মসজিদের ঈমাম মুয়াজ্জিনকে সামনে রেখে এই বিপুল অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের নবারুন স্কুলের সামনে থেকে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানে পাঁচজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে জেলা কর্মকর্তা রহমতউল্লাহ, সহকারি হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা আব্দুল খালেক, সদর উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ইহসানুর রহমানসহ পাঁচজন। এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বেশি টাকা আত্মসাত কারি সদর উপজেলা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বেলাল হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চম্পট দেয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর, এমনকি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি না নিয়ে দেদারছে কোটি কোটি টাকা আমানত সঞ্চয় করে প্রতারনার ফাঁদ পেতেছে সাতক্ষীরায় আলÑকারীম ফাউন্ডেশন। যে কোনো সময় প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের মোটা অংকের এ টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারেন বলে অনেক গ্রাহকের আশাংকা। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাধারন ও এফডিআর এর নামে হাতিয়ে নিয়েছে আল-কারীম ফাউন্ডেশন নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপক্ষে গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য সামান্য কিছু ঋনও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহকরা জানান, ২০০৬ সালে সাতক্ষীরায় নবারুল স্কুলের সামনে আল-কারীম ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কয়েকজন ব্যক্তির সহযোগিতায়। এর মুল দায়িত্বে রয়েছেন যশোরের আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যাক্তি। প্রথমে তারা তেমন কোন সাড়া না পেলেও প্রতারক চেয়ারম্যান সাতটি উপজেলায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গ্রাহককে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী আমানাত সংগ্রহ শুরু করেন। আল-কারীম ফাউন্ডেশনের জেলা কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ জানান, ২০০৬ সাল থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে সাধারন গ্রাহকের টাকা আছে ৩ কোটি ৬৩ টাকা ও এফডিআর আছে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ টাকায় ৭ শত টাকা তিন বছর মেয়াদি ৯শত টাকা ও ৫ বছর মেয়াদি ১ হাজার টাকা দেয়া মুনাফা দেয়া হয় গ্রাহকদের। কিভাবে এত বিপুল অংকের টাকা লেনদেন করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাশ বই ও মানি রিসিটের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকি। কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া কিভাবে এত বিপুল পরিমান টাকা সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যশোরের সাজ্জাদ সাহেব যা করেন তাই হয়। আমরা এখানে সামান্য বেতনে চাকুরী করি। আল-কারীম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন সেলফোনে জানান, আমি ইসলামী আন্দোলনের একজন সদস্য। আমি যখন শুরু করি তখন এত আইন-কানুন দেখা হয়নি। এখন সরকার না চাইলে আমি ২০২০ সালের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেব। এতদিন কিভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে এত টাকা সংগ্রহ করলেন তার এবং তা নিজের একাউন্টে রাখেন তার কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ভাবেই চালাতে পারেন না। এমনকি তাদের দপ্তরেরও কোনো নিবন্ধন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেবাশীষ সরদার জানান, গত এক সপ্তাহ আগে সমাজসেবা থেকে তারা একটি নিবন্ধন নিয়েছে। এই নিবন্ধনের আলোকে কোনো আর্থিক লেনদেন করার কথা নয়। তারা আরও আগে থেকে মোটা অংকের টাকা আমানাত সংগ্রহ করছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় আয়ূব আলী নামের একজন গ্রাহক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। গ্রাহকরা যাতে তাদের টাকা ফেরত পায় সেজন্য অভিযোগ পেলে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালানো সম্পূর্ণ বে-আইনী। কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।