আন্তর্জাতিক

সামরিক সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্র, কৌশলগত অবস্থানে ইরান শক্তিশালী

By Daily Satkhira

January 06, 2020

বিদেশের খবর: সামরিক সক্ষমতায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিঃসন্দেহে সবার ওপরে। বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধে থাকা ইরানের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কৌশলগত অবস্থান গত কয়েক বছরে শক্তিশালী হয়েছে বেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এর নেতৃত্বে ছিলেন।

ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের বিরুদ্ধে ইরান নিজের অবস্থান সংহত করেছে। এসব অঞ্চলের ছদ্মযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ এবং কৌশলগত অবস্থানের নেতৃত্ব এখন কুদস ফোর্সের নতুন প্রধান জেনারেল ইসমায়েল কায়ানির হাতে। চলমান উত্তেজনা যুদ্ধের দিকে মোড় নিলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে থাকা এই মিত্র দেশগুলো ইরানের শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ইয়েমেন, ইরাক থেকে লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর পাশাপাশি সিরিয়া, ফিলিস্তিন এবং আফগানিস্তানের সুন্নি সম্প্রদায়ও ইরানের মিত্র হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে যাবে।

পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার পর শুক্রবার ইরাকে অতিরিক্ত সাড়ে তিন হাজার সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর আগে থেকে দেশটিতে আরও প্রায় ছয় হাজার সেনার অবস্থান আছে। ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ইরাক। বাগদাদে জেনারেল সোলাইমানির সঙ্গে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর কমান্ডার আবু মাহদি আল মোহানদিস নিহত হন শুক্রবার।

সিরিয়ায় এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০০ সেনার উপস্থিতি রয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অন্যতম মিত্র দেশ ইরান। ব্রাসেলস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজে) জানিয়েছে, সিরিয়া-জর্ডান সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী খুব কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান নিয়ে আছে। ইরানের আরেক প্রতিবেশী আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার সেনা রয়েছে। এই দেশটিও ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ছদ্মযুদ্ধের একটি ফ্রন্ট হয়ে উঠতে পারে।

ইরানের প্রতিবেশী আরও কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটি রয়েছে। কুয়েতে প্রায় ১৩ হাজার, জর্ডানে তিন হাজার, সৌদি আরবে তিন হাজার, বাহরাইনে সাত হাজার, ওমানে ৬০০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ হাজার, কাতারে ১৩ হাজার এবং তুরস্কে আড়াই হাজার যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অবস্থান করছে। পারস্য উপসাগরের দেশ কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে। ঠিক তার পাশের দেশ বাহরাইনে একটি বিমান ও দুটি নৌঘাঁটি রয়েছে। কুয়েতে রয়েছে একটি বিমানঘাঁটি। ইরাক এবং জর্ডানে একটি করে বিমানঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আরব সাগরের পাশের দেশ ওমানে চারটি বিমান ও দুটি সেনাঘাঁটি রয়েছে তাদের।

পারস্য উপসাগর থেকে আরব সাগর পর্যন্ত আনাগোনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহরের। এই নৌবহরের অধীনে ছোট ছোট আরও কিছু যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে পঞ্চম নৌবহর মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয়। ভাইস অ্যাডমিরাল জেমস জে ম্যালয় এই নৌবহরের কমান্ডার।

অন্যদিকে, সাড়ে তিন লাখ সদস্যের ইরানি সেনাবাহিনীতে ট্যাঙ্কের সংখ্যা দেড় হাজার। আর্টিলারি রয়েছে প্রায় সাত হাজার। বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বাহিনীটির হাতে। এ ছাড়া এক লাখ ২৫ হাজার সদস্যের অভিজাত বিপ্লবী গার্ড বাহিনী রয়েছে ইরানের। স্থল বাহিনীর পাশাপাশি ২০ হাজার সদস্যের নৌবাহিনী রয়েছে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অধীনে। মধ্য থেকে স্বল্পপাল্লার ৬০০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এ বাহিনীর হাতে।

ইরানের বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজার। যুদ্ধবিমান আছে ৩৩৪টি। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আছে ৫১৪টি। প্রায় ১৮ হাজার সদস্যের নৌবাহিনীতে আছে ২১টি সাবমেরিন। বিমানবাহী রণতরী আছে ২৩টি। সূত্র :ওয়াশিংটন পোস্ট ও এএফপি।