সাতক্ষীরা

নামের ভুলে বিনা অপরাধে ২৭ দিন জেল খেটে বেকসুর খালাস পেলে সাতক্ষীরার রবিউল

By daily satkhira

January 08, 2020

নিজস্ব প্রতিনিধি : ‘বিনা অপরাধে পুলিশ আমাকে ২৭ দিন জেল খাটালো। আমি কোন দিনও প্রদীপন মানবিক সংস্থায় কেন, কোন এনজিওতে চাকুরি করিনি। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নন মেট্রিক। একটি মানবিক (ঋণদান) সংস্থার উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক হতে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে তা আমার কোনদিনও ছিল না। আমি বরাবরই মুনজিতপুরের বাসিন্দা। আমি কখনোই কাছারিপাড়ায় বা খুলনার বানরগাতিতে থাকিনি। আমার বাবার নাম আমানউল্লাহ, আর রবিউল হকের বাবার নাম ডাঃ আনোয়ারুল হক। কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিনকে হাতে পায়ে ধরে বলেছিলাম, স্যার আমাকে রবিউল হক ভেবে জেলে পাঠালে আমার সংসারের ব্যাপক ক্ষতি হবে। কিন্তু তিনি কথা রাখেন নি। উপরন্তু আমাকে কিল চড় সহ্য করতে হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাতটায় বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এ প্রতিবেদককে এভাবেই আর্তি জানান সাতক্ষীরার মুনজিতপুরের এসএম আমানউল্লার ছেলে এসএম রবিউল ইসলাম। তার খালাস পাওয়ার জন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। এসএম রবিউল ইসলাম আরো বলেন, সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিনকে বুঝাতে না পেরে আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম তিন তিন বার আমার জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পৌরসভার পানির বিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে স্বজনদের নিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখান। তিনি কোন কথা শোনেননি। বলেন, আদালতে যেয়ে প্রমান করে আসুন যে আপনার ভাই রবিউল হক নয়। এরপরও বড় ভাই আমার সামনে ওসি সাহেবের কাছে আকুতি মিনতি করেছেন কিছু সময় নিয়ে বিষয়টি যাঁচাই করার জন্য। তিনি কথা রাখেননি। উপরন্তু শুনিয়েছেন নানান কথা। নামের আংশিক মিল থাকার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে যেভাবে আমাকে দু’ পুলিশ কর্মকর্তা ২৭ দিন জেল খাটালেন, বড় অংকের আর্থিক ক্ষতি করলেন তাদের বিচার চাই।’ ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার তৎকালিন মোল্লারহাট ও চিতলমারি উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক রবিউল হক ছয় লাখ ২৩ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার তৎকালিন বাগেরহাট জেলার ও বর্তমানে খুলনা বিভাগের ব্যবস্থাপক কামাল আহম্মেদ চৌধুরী বাদি হয়ে ২০১০ সালের ১৮ মে সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও খুলনার বানরগাতির হাজী ইসমাইল রোডের ভাড়াটিয়া ডাঃ আনোয়ারুল হকের ছেলে রবিউল হক এর নামে বাগেরহাটের বিচারিক হাকিম আদালতে সিআর-৭৯/১০ নং মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমলী প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ রেজোয়ানুজ্জামান আসামীকে দু’ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১৮ সালের পহেলা মার্চ রবিউল হক এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের এসএম রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, রবিউল হক কে কাছারিপাড়ায় না পেয়ে তাকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির পাশ থেকে গ্রেপ্তার করেন কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন। গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনিই নাকি রবিউল হক। ভাই নজরুল ইসলাম ভোটার আইডি কার্ড, নাগরিক সনদপত্র, পৌরসভার পানির বিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রাদি নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি তাকে রবিউল হক বলে আদালতের মাধ্যমে ১৩ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠান। জানতে চাইলে সাতক্ষীরার কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দি ঘটনার সত্যতা অস্বীকার না করেই বলেন, ওসি স্যারই সব ভাল বলতে পারবেন। তাকেই বরং জিজ্ঞাসা করুন।তবে বার বার অনুরোধ স্বত্বেও এসএম রবিউলকে যাঁচাই বাছাই না করে জেলে পাঠানো হলো কেন এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে। বাগেরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত পহেলা জানুয়ারি এসএম রবিউল ইসলামের জামিনের জন্য বাগেরহাটের আমলী প্রথম আদালতে আবেদন করা হয়। বিচারক সমীর কুমার মল্লিক মামলার বাদি অথবা তার পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. অসীম কুমার সাহা’র উপস্থিতিতে জামিন শুনানীর জন্য গত ৬ জানুয়ারি সোমবার দিন ধার্য করেন। আদালত শুনানীকালে বাদির উপস্থিতিতে শুনানীর জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ি মামলার বাদি কামাল আহম্মেদ চৌধুরী গ্রেপ্তারকৃত এসএম রবিউল ইসলাম তার দায়েরকৃত মামলার আসামী নন বা তিনি কোন দিনও তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেননি বলে আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানী শেষে এসএম রবিউল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।