জাতীয়

শেয়ারবাজারে দরপতন থামছে না

By Daily Satkhira

January 15, 2020

দেশের খবর: পুঁজিবাজারে দরপতন থামছেই না। প্রতিদিনই বড়ো দরপতন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। এক কার্যদিবসের ব্যবধানে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৮৭ পয়েন্ট। সোমবারও প্রধান সূচক ৮৯ পয়েন্ট কমেছিল। গত সপ্তাহ জুড়েই পতন হয়েছিল শেয়ারবাজারে।

দরপতনের প্রতিবাদে গতকাল মতিঝিলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন তারা। সূচকের এই অবস্থা গত ৫৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লক্ষ করা যাচ্ছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ মে এত নিচে অবস্থান করছিল ডিএসইএক্স সূচকটি।

মঙ্গলবারও দরপতনের মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ১১০ পয়েন্ট কমে গেলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মতিঝিলের ডিএসই ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়। এর আগে সর্বশেষ আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে ২৭ আগস্ট ডিএসইর পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। সে সময় বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ বন্ধ হলেও পুঁজিবাজারে দরপতন থামেনি। এখন সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে দিন পার করছেন। গত আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত দিনই বড়ো পতন হয়েছে। এই সাত দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টের বেশি।

বাজার পরিস্থিতি : গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৩৫৫টি কোম্পানির ১১ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ২৬২ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৬ টাকা। লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ২৯৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টি কোম্পানির শেয়ার। ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৮৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে ৪০৩৬ দশমিক ২৪ পয়েন্ট, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ২৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে ১৩৬১ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২২ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ৯০৭ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। টাকার অঙ্কে দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো এসএস স্টিল, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল, গোল্ডেন হারভেস্ট, মেঘনা পেট, সমতা লেদার, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মেঘনা কন্ডেন্সড মিল্ক, স্টাইল ক্রাফট, বিকন ফার্মা ও নর্দান জুট।

এদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গতকাল মঙ্গলবার ২৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩০০ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৪৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ১৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর। সিএসইতে গতকাল ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা সোমবারের চেয়ে ৪ কোটি টাকা কম।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদারক কমিটির বৈঠক ২০ জানুয়ারি

পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত সমন্বয় ও তদারক কমিটি আগামী ২০ জানুয়ারি বৈঠকে বসবে। বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০ জানুয়ারি দুপুর ২টায় আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বৈঠক করেছে। তাদের দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রণয়নসহ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে এই কমিটি। এছাড়া বাস্তবায়নের অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মনিটরিং করে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে।

সর্বোত্তম সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে এ পর্যন্ত যতগুলো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম প্রস্তাব বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল গভর্নর ফজলে কবীরের সঙ্গে সাক্ষাত করে। এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে সিঙ্গেল ডিজিটের সুদহার বাস্তবায়ন, খেলাপি ঋণ, ব্যবসা সহজীকরণ, বর্তমান পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি এবং মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়। তবে পুঁজিবাজারের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন গভর্নর। গভর্নর ডিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় এ পর্যন্ত যেসব প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম প্রস্তাব বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে।