শ্যামনগর প্রতিনিধি : মুজিববর্ষ ২০২০ উপলক্ষ্যে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দৃষ্টি আকর্ষন স্থান শ্যামনগর সদর চৌরাস্তার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কের প্রবেশপথে বঙ্গবন্ধু তোরণ উদ্বোধন করলেন এমপি জগলুল হায়দার। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) সন্ধ্যা ৬ টা ৪৭ মিনিটে শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস এর সহযোগীতায় বঙ্গবন্ধু তোরণ আধুনিকতার ছোয়ায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু তোরণ উদ্বোধনকালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ জহুরুল হায়দার বাবু (পিপি), উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম, অধ্যক্ষ জুলফিকার আল মেহেদী লিটন ও প্রভাষক মোশারফ হোসেন প্রমুখ। মুজিব বর্ষ হল বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত এ বর্ষ উদ্যাপন করা হবে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু খ্যাত এই তেজস্বী নেতা অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে) ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আবার ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করবে। দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় ঘোষিত বর্ষটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়টুকু উদ্যাপিত হবে মুজিব বর্ষ হিসেবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিব বর্ষ উদ্যাপনের নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, বেশ একটা কর্মযজ্ঞ চলছে। যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি, তা হবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে। এই কথাটা কিন্তু গভীরভাবে ভাবার মতো। আজ যখন পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ থেকে দেখি, কুড়িগ্রামের ৩০ ভাগ মানুষ তিন বেলা পেট পুরে খেতে পায় না, তখন খুবই বিষণ্ন বোধ করি। আর আছে মর্যাদাপূর্ণ জীবনের কথা। প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এই কথাটার মানে কি আমরা বুঝি! রবীন্দ্রনাথেরই কথা যে, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!’ মানুষকে যেন আমরা অপমান না করি। বঙ্গবন্ধু মুজিব সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। তাঁর প্রকাশিত বই দুটি অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর কারাগারের রোজনামচা আমাদের অবশ্যপাঠ্য। শুধু পড়লেই চলবে না, তাঁর কথাগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না।’ বঙ্গবন্ধু কারাগারের রোজনামচায় লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে তো কিছুই নাই। এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে। পাকিস্তানকে শাসকগোষ্ঠী কোন পথে নিয়ে চলেছে, ভাবতেও ভয় হয়। আজ দলমত-নির্বিশেষে সকলের এই জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।’ (৩০ জুন ১৯৬৬) ১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীতে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি কী চাই? আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার বেকার কাজ পাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণ ভরে হাসুক। ২০২০ সালের অঙ্গীকার হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যা মূর্ত আছে আমাদের ১৯৭২-এর সংবিধানের মৌল চার নীতিতে—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতায়। সেই চেতনায় শ্যামনগরে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে নানাবিধ কর্মসূচীর অংশ বিশেষে বঙ্গবন্ধু তোরণ নির্মিত হয়েছে।