নিজস্ব প্রতিনিধি: দেবহাটায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উলঙ্গ করে বিকৃত আনন্দ উল্লাসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকার চিহ্নিত ইভটিজার বখাটে রাজিবসহ তার সহযোগীরা বাড়ি থেকে আত্নগোপনে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পাঁচপোতা এলাকায় রাজিবের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল বাহিনী। আর এই বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন নারীরা। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদেরকে হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ না করে নিরবে সব মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। এই রাজীব পাঁচপোতা গ্রামের এক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে।
রাজিব এলাকায় এক অপরাধ রাজ্য গড়ে তুলেছেন। রাজীব বাহিনীর প্রধান রাজীবের মনোরঞ্জন করতে বিভিন্ন সময় পাঁচপোতা মোড়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একই গ্রামের মধ্যবয়সী প্রতিবন্ধী হামিদুল সরদারকে। এরপর রাজীবের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পোষাক খুলে ভিডিও ধারণ করেন একই এলাকার আব্দুল করিম মৃধার ছেলে ইছা মৃধা, শাহাদাত হোসেনের ছেলে ইউনুস আলী। উপস্থিত বাকি সদস্যরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নানাভাবে নির্যাতন করে। দীর্ঘ সময় পর ছেড়ে দিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাড়িতে যেয়ে অপমান সহ্য করতে না পেরে কেঁদে কেঁদে সারারাত পার করেন। এদিকে রাজীব বাহিনী এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। একই সাথে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাড়ির পাশে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মাদক সেবনের পাশাপাশি আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। পরদিন সকালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে রাজীব, ইছা, ইউনুস সহ মুলহোতারা আত্নগোপনে চলে যায়। এঘটনায় ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাকে তারা উঠিয়ে নিয়ে অত্যাচার করেছে। তারা আমাকে বলেছে তোর সাথে এসব করেছি তার স্বাক্ষী দেবে কে? আমার খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আত্নহত্যা করি। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে আমাদের অত্যাচারের শেষ থাকবে না। এসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যখন নির্যাতনের ঘটনরি বিবরণ দিচ্ছিলেন তখন আরেক বাকপ্রতিবন্ধী নারী এসে ঐ বাহীনির নির্যাতনের কথা আকার ইঙ্গিতে বর্ণনা করার চেষ্টা করেন। নির্যাতিতা প্রতিবন্ধীর স্ত্রী জানান, আমরা খুবই অসহায়, সব সময় ভয়ে ভয়ে কাটে। বৃহস্পতিবার আমি যখন দোকান থেকে বিস্কুট ও টুথপেস্ট কিনে ফিরছিলাম রাজীব তখন আমার হাত থেকে ঐ মালামাল কেড়ে নেয় এবং আমার সাথে অশালীন ব্যবহার করে। তবে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে বলেও জানান তিনি। তার স্বামীর সাথে হওয়া অন্যায় আর কারো সাথে না হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে অভিযুক্ত রাজীব, ঈছা, ইউনুসের বাড়িতে গেলে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার দিতেও সম্মত হননি পরিবার। একই সাথে যে স্থানে তারা রাতে উল্লাস করে তার পাশেই ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও রাজীবের চাচা আব্দুল করিম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। তবে এলাকায় বখাটের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নারীরা রাতে ঘরের বাহিরে একা বাহির হতে পারেন না বলে অনেকে তার কাছে অভিযোগ করেছেন। দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য যে, এই বাহিনীর সদস্যদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সু-সম্পর্ক থাকায় তাদের বিরুদ্ধের অভিযোগের কোন প্রতিকার হয়না। এ কারণে অনেকে প্রতিবাদ না করে নিরবে সব সহ্য করেন। তাই সচেতন মহল মনে করেন এমন বাহিনীর অপরাধামূলক কর্মকাণ্ড এখনই বন্ধ করার দরকার। না হলে সমাজে এর পরিধি বিস্তার লাভ করবে।