আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শতাধিক পশতুন তরুণীকে ধরে নিয়ে গেছে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা। তাছাড়া গুম হয়েছেন অঞ্চলটির বহু সংখ্যক অধিকার কর্মী। এমন অবস্থায় পশতুনিস্তান লিবারেশন আর্মি গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের পশতুন জনগোষ্ঠী। দলটির নেতাদের বরাতে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শতাধিক পশতুন তরুণীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার এবং নির্যাতন বন্ধে পশতুন তাহাফুজ মুভমেন্ট (পিটিএম) নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিল স্থানীয় তরুণরা।
তখন পশতুন নারীদের অপহরণ করে যৌনদাসী বানিয়ে তাদের ভোগ, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা বিষয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করায় অল্প দিনেই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে সংগঠনটি। পরে পিটিএমর একটি অংশ নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিতে গঠন করে পশতুনিস্তান লিবারেশন আর্মি।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ’পিটিএম ইন পাকিস্তান অ্যানাদার বাংলাদেশ ইন মেকিং’ শিরোনামে একটি কলাম প্রকাশ করেছিল কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
পাকিস্তানি সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকি বলেছিলেন, পশতুনের জনপ্রিয় তরুণ নেতা নকিবুল্লাহ মেহসুদকে হত্যার পর স্বাধিকার আন্দোলন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খাইবার পাখতুনওয়ায়।
২০১৮ সালে বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান নকিবুল্লাহ মেহসুদ নামে সেই নেতা। পরে গত ২৪ জানুয়ারি তাকে পাকিস্তানের আদালত থেকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।
সাংবাদিক সেই কলামে আরও বলেন, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার পরিবর্তে পাক সামরিক বাহিনীর অভিযানে নির্দোষ মানুষকে শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। যেখানে গোটা পাকিস্তান জুড়ে পশতুনদের সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। যদিও পশতুনরাই সেখানে উল্টো সন্ত্রাসবাদের শিকার।
অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানেও একই ধরনের অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার আন্দোলনে রূপ নেয় এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী সেই সময়ের সর্ববৃহৎ জাতিগত গোষ্ঠী বাঙালিরা জেনারেল আইয়ুব খান নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উপেক্ষা, বঞ্চনা, শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। বাঙালিদের বঞ্চনার অভিযোগ শোনা ও অবিচার মোকাবেলার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। ফলে সশস্ত্র প্রতিরোধ ও স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন বাঙালিরা; ভেঙে যায় পাকিস্তান, জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশের।
৫০ বছর পরে এখন মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ইতিহাস থেকে অনেক কিছুই শিক্ষা নেয়নি এবং একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে তারা, যা ১৯৭০ সালের মতো পাকিস্তানের জন্য অনেক ব্যথা, রক্ত বন্যা ও অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চলতি মাসেই পিটিএম তাদের প্রতিষ্ঠার এক বছর পালন করেছে। এখন পাকিস্তানের সামরিক এবং বেসামরিক নেতৃত্ব পশতুন জনগোষ্ঠীর বৈধ উদ্বেগ, তাদের দাবি-দাওয়া পাক সংবিধান অনুযায়ী ভালোভাবে মোকাবেলা করবে এবং এটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। শিগগিরই নিপীড়ন বন্ধ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
যদি মানবাধিকার নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে ইতোমধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়া একটি দেশের ভাঙনের জন্য অনুঘটক হতে পারে পিটিএম এবং পাকিস্তান আরো একটি জাতীয় বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।