আমির হোসেন খান চৌধুরী : সরকরিভাবে বন্দোবস্তকৃত চিংড়ি ঘের জবর দখল, ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্যোগ নেওয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এ সময় ঘেরের বাসা ভাঙচুর করে ৫০ হাজার টাকার মাছ ও মাছ ধরার সরঞ্জাম লুট করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের যুগিপোতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, ধুলিহর ইউনিয়নের নেহালপুর গ্রামের মৃত তারক মিস্ত্রির ছেলে অশ্বিনী মিস্ত্রি(৬০), তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মিস্ত্রী (৪০), নিরঞ্জন মিস্ত্রি (৪৮), তার স্ত্রী অনিমা রানী মিস্ত্রী (৩৫) ও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিরঞ্জন মিস্ত্রি জানান, ১৯৮১ সালে তার বাবা তারক চন্দ্র মিস্ত্রী ধুলিহর মৌজার যুগিপোতা গ্রামের হাল ১৪৬২৮ দাগে ৮৯ শতক ও ১৪৮৫২ দাগে ২৭ শতক জমি বন্দোবস্ত নেন। ১৯৯২ সালে একই বয়ারবাতান গ্রামের সুদীপ সরকারের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য ভৈরব সরকার ওই জমি সুধান্য সরকারের মা ভদি সরকারের কাছ থেকে কোবালা দলিল মূলে কিনেছেন মৌখিকভাবে দাবি করে ওই জমি থেকে তারক মিস্ত্রীকে উচ্ছেদ করে। নিরঞ্জন মিস্ত্রী আরো জানান, গত বছরের ১৮ অক্টোবর সদর সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিস থেকে ওই জমি তার বাবার নামে বন্দোবস্ত দলিল আছে উল্লেখ করে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকদিন পর ওই জমি তার নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য তাকে বাবার সময়কার বন্দোবস্ত বাবদ হাঁস মুরগি ও ছাগল বিক্রি করা ৪০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ি ১৪২৩ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ওই জমির বন্দোবস্তের মেয়াদ ছিল। ১৪২৪ সালের বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য তিনি গত বৃহষ্পতিবার সদর সহকারি ভূমি কমিশানারের অফিসে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাকে ১৬ এপ্রিল অফিসে আসতে বলেন। প্রত্যক্ষদর্শী যুগিপোতা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদ, ছাদেকুর রহমান, সঞ্জয় মিস্ত্রী, ধুলিহর সানা পাড়ার বাকির হোসেনসহ কয়েকজন জানান, সাবেক ইউপি সদস্য ভৈরব সরকার তার ভাই শৈলেন্দ্র নাথের স্ত্রী সবিতা রানী হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘ ২৫ বছর তারক মিস্ত্রীর বন্দোবস্তকৃত জমি জবরদখলে রাখার পর পাঁচ মাস আগে হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টি তিনি সহজে মেনে নিতে পারেননি। একপর্যায়ে গত ৩০ চৈত্র নিরঞ্জন মিস্ত্রীর বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি ওই জমি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা নেন। এজন্য তিনি সাবেক জাপা নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সানা ওরফে বাবু সানার সঙ্গে পরামর্শ করে তারই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য বহু জায়গার জবরদখলে নেতৃত্বদানকারি সানাপাড়ার এরফান, ইসমাইল, তুল্লুক, সাইফুলদের শরনাপন্ন হন। একপর্যায়ে শনিবার সকাল ৯টার দিকে ওই সন্ত্রাসীসহ ভৈরব সরকার , তার ভাই শৈলেন সরকার, দিবস সরকার, নিরাপদ সরকার , গনেশ মিস্ত্রীসহ উপরোক্ত সন্ত্রাসীরা দা, শাবল, লোহার রড, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি নিয়ে নিরঞ্জন মিস্ত্রীর ওই মাছের ঘেরে হামলা চালায়। একইসাথে তারা ওই ঘেরে একটি বাসা বাঁধার প্রক্রিয়া শুরু করে। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি তাতে বাঁধা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে খুব শীঘ্র সমস্যার সমাধান করে দেবেন বলে নিরঞ্জন মিস্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। এরপর ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নিরঞ্জন মিস্ত্রীর চিংড়ি ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও মাছ লুটপাট শুরু করলে নিরঞ্জন মিস্ত্রী, তার স্ত্রী অনিমা রানী মিস্ত্রী, অশ্বিনী কুমার মিস্ত্রী ও তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী মিস্ত্রী বাধা দেন। এ সময় হামলাকারিরা ওই চারজনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ ঘটনাস্থলে এসে মোবাইল ফোনে এম্বুলেন্স আনার উদ্যোগ নিলে হামলভকারিার তাকে মারতে মারতে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধের উপরে নিয়ে যায়। পরে আহত একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শনিবার বিকেলে হাসপাতালে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হাতে তাকেসহ নিরঞ্জন মিস্ত্রী পরিবারের চারজন জখম হয়েছে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হাসপাতাল চত্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদের হাসপাতাল চত্বরে চেয়ারম্যানের হাতাহাতি হয়। হামলার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেয়ারম্যানের পরামশে কাল্পনিক জখম সৃষ্টি কর্রে ভৈরব সরকারের স্ত্রী কামনা সরকার ও শৈলেন সরকারের স্ত্রী সবিতা সরকারকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে আব্দুল হামিদসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ভৈরব সরকারের স্ত্রী কামনা সরকার জানান, তাদের জমি নিরঞ্জনরা জোর করে দখল করতে গেলে বাধা দেওয়ায় তাদেরকে মারপিট করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালট্যান্ট ডাঃ শরিফুল ইসলাম জানান, অশ্বিনী মিস্ত্রীর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার কারণে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বেইন সিটি স্ক্যানের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাড়ভাঙা রক্তাক্ত জখম রয়েছে। নিরঞ্জন মিস্ত্রীর ডান হাত, বাম হাত, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানের হাড় ভারী জিনিসের আঘাতে ভেঙে গেছে। অশ্বিনী ও নিরঞ্জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক। তবে সন্ধ্যা রানী মিস্ত্রী ও অনিমা রানী মিস্ত্রীর জখমও আশঙ্কাজনক। এ বিষয়ে জানার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু সানার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রিসিভ করেননি। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়ে। তবে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন পক্ষই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।