বিনোদন সংবাদ: দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ইমন ওরফে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ তথ্য তুলে ধরবে এবং ওই দিনই আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য কী কী প্রশ্ন আসতে পারে তা নির্ধারণ করে এর উত্তর তৈরি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এতটুকু বলা যায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আলোচিত এ মামলা অধিকতর তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর পিবিআইর পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম তদন্ত শুরু করেন। তিনি তদন্ত শুরুর পর ১০ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও একজন সাক্ষীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা সাক্ষীরা হলেন প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরী, ঘটনার সময়ের সাক্ষী হুমায়ুন কবির, আবদুস সালাম, দেলোয়ার হোসেন শিকদার, আবদুল খালেক হাওলাদার, চলচ্চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার, শাহ আলম কিরণ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এম আলোক সিকদার ও হারুন অর রশিদ। ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর সালমান শাহর মামা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আলমগীর কুমকুম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহকে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের নিজ বাসায় শয়নকক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই সময় তার বাবা রিভিশন মামলা করেন।
২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারকের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারেন। মামলাটি এরপর র্যাব তদন্ত করে। তবে র্যাবের তদন্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬-এর বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে।