নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকরিভাবে বন্দোবস্তকৃত চিংড়ি ঘেরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও জখমের ঘটনায় মামলা না নিয়ে আটককৃত হামলাকারিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুর একটার দিকে সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মোঃ নাসিরউদ্দিন তাকে ছেড়ে দেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিরঞ্জন মিস্ত্রি জানান, ১৯৮১ সালে তার বাবা তারক চন্দ্র মিস্ত্রী ধুলিহর মৌজার যুগিপোতা গ্রামে এক একর ১৬ শতক জমি বন্দোবস্ত নেন। ১৯৯২ সালে সাবেক ইউপি সদস্য ভৈরব সরকার আলিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি থেকে তার বাবাকে উচ্ছেদ করেন। বাবার নেওয়া বন্দোবস্তের ৩৬ বছরের টাকা পরিশোধ করে গত বছরের ১৮ অক্টোবর ওই জমি তার নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয় বাংলা ১৩২৩ সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত। ১৪২৪ সালের বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য তিনি গত বৃহষ্পতিবার সদর সহকারি ভূমি কমিশানারের অফিসে আবেদন করেন। গত ৩০ চৈত্র তার বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি নব্য আওয়ামী লীগ নেতা ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সানা ওরফে বাবু সানার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য সানাপাড়ার এরফান, ইসমাইল, তুল্লুক, সাইফুলদের সঙ্গে নিয়ে শনিবার সকাল ৯টার দিকে তার মাছের ঘেরে হামলা চালায়। চিংড়ি ঘেরের বাসা ভাঙচুর ও মাছ ও মাছ ধরার সরঞ্জাম লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনিসহ তার স্ত্রী অনিমা রানী মিস্ত্রী, অশ্বিনী কুমার মিস্ত্রী ও বউদি সন্ধ্যা রানী মিস্ত্রীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করায় ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদকে মারতে মারতে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধের উপরে নিয়ে যায় হামলাকারিরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শনিবার সকাল ১০টায় হামলাকারি দিবস সরকারকে আটক করে। ইউপি চেয়ারম্যান শনিবার বিকেলে হাসপাতালে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হাতে তাকেসহ নিরঞ্জন মিস্ত্রী পরিবারের চারজন জখম হয়েছে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হাসপাতাল চত্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের হাতাহাতি হয়। হামলার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে রোববার তাদের বিরুদ্ধে সবিতা সরকারকে দিয়ে কাল্পনিক হামলা ও মারপিটের অভিযোগ করানো হয়। বয়ারবাতান গ্রামের কাঁকড়া ব্যবসায়ি ভৈরব সরকার জানান, অশ্বিনী মিস্ত্রী তার ভগ্নিপতি। তাদের উপর হামলার খবর পেয়ে তিনি শনিবার হাসপাতালে ও থানায় যান। সঞ্জয় মিস্ত্রীর অভিযোগটি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশ মত ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিনের কাছে শনিবার রাত ১০ টার দিকে নিয়ে যান। এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা আহসানডাঙার উদ্দেশ্যে রওনা হলে তিনি ওই কাগজটি পিওন অশোক দাসের কাছে দিয়ে যান। যদিও রোববার সকাল ১০ টায় তাকে ফাঁড়িতে ডেকে এনে গাজা ও ধর্ষণের মামলা দেওয়ার নামে তিন ঘণ্টা আটক রাখেন উপ-পরিদর্শক নাসিরউদ্দিন। পরে আটককৃত হামলাকারি দিবস সরকারকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ইউপি সদস্য তপন শীলের মধ্যস্ততায় দুপুর একটার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভৈরব সরকার অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে সবিতার মামলায় গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে দিবস সরকারকে ছাড়ানোর জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করেই তাকে তিন ঘণ্টা আটক রাখা হয়। উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন হামলাকারি সাবেক ইউপি সদস্য ভৈরব সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের আথিক সুবিধা নিয়ে নির্যাতিতদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাতক্ষীরা সদর সহকারি (ভূমি) কমিশনারের খাস জমি সংক্রান্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩০ চৈত্র বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিরঞ্জন মিস্ত্রী আবারো আবেদন করেছেন। ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন জানান, সঞ্জয় সরকারের দায়ের করা একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শনিবার রাতে তার কাছে পাঠান। ওই অভিযোগপত্রটি কাঁকড়া ব্যবসায়ি ভৈরব সরকার ফাঁড়ির এক পিওন অশোক দাসের কাছে দিয়ে যান। এটা জানার পর তিনি ভৈরব সরকারকে অশোক দাসের মারফৎ ফাঁড়িতে ডেকে আনেন। সাবেক ইউপি সদস্য ভৈরব সরকারের ভাবী সবিতা সরকার বাদি হয়ে একটি অভিযোগ করলে তাতে ভৈরব সরকার আসামী ছিল। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দেখতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সেটা আর প্রয়োজন হচ্ছে না। উভয়পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাই ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলায় দিবস ও ভৈরবকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, এ ঘটনায় সঞ্জয় কুমার মিস্ত্রী বাদি হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আট জনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে ও শৈলেন সরকারের স্ত্রী সবিতা বাদি হয়ে রোববার সকালে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের তদন্ত করার জন্য ব্রহ্মরাজপুর ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নাসিরউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।