প্রতিবেদক, আশাশুনি: আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বেলা ১১টায় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আগরদাড়ী গিয়ে দেখা গেছে, উক্ত ওয়ার্ডে কর্মসৃজন কর্মসূচির নির্ধারিত তালিকায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও সেখানে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন আঙ্গুরের একান্ত সহযোগী হাবিবুর সরদারের ছেলে পলাশ সরদার, ওবায়দুল্লাহ এর স্ত্রীর রীমা খাতুন, রেজাউল করিমের ছেলে শাকিল আহমেদ, গ্রাম পুলিশ মফিজুল ইসলামের স্ত্রী জোসনা খাতুন, ইউনুস আলীর ছেলে রুবেল হোসেন, কেরামত আলীর ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক অনুপস্থিত। এছাড়াও তালিকায় যাদের নাম উল্লেখ করা আছে তাদের অনেকেই কাজে নেই। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রকে লাগানো হয়েছে কর্মসূচির কাজে। কিন্তু নামের তালিকায় কোথাও তার নাম পাওয়া যায়নি। পরে জানা গেছে সে তার ঠাম্মার পরিবর্তে কাজে এসেছে। কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্প দেওয়া থাকলে সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিয়ম না মেনে আগরদাড়ি উত্তরপাড়া জামে মসজিদের পাশে এবং ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন আঙ্গুরের পারিবারিক গোরস্থান ভরাটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। গোরস্থান ভরাটে ২৯ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত ছিল ২৫ জন এবং আগরদাড়ি পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের পাশে ৮ জন শ্রমিক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে উপস্থিত ছিল ৬ জন শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন আঙ্গুর এর বিরুদ্ধে কর্মসূচির কাজের জন্য লোক নিয়োগে উৎকোচ গ্রহণ, অনুপস্থিত শ্রমিকদের টাকা ভাগাভাগি, কর্মসৃজন এর লোক যাচাই-বাছাই এ স্বজনপ্রীতি, নিজের বাড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যে উদ্দেশ্যে সরকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ চালু করেছিল সে উদ্দেশ্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন আঙ্গুর মুঠোফোনে জানান, আমি সব সময় ন্যায়ের পক্ষে, চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে বলেছেন কর্মসূচির কাজে কোনো দুর্নীতি করা যাবে না। যদি কেউ অনুপস্থিত থাকে তাহলে টাকা পাবে না। অপরদিকে, গত মঙ্গলবার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কুল্যা ইউপি চেয়রম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী নিজে সরোজমিনে গিয়ে মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, মিজানুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম আজাদ, সুভাষ দাসের স্ত্রী সুন্দরী দাসী, আলাউদ্দীন সরদারের ছেলে বেলাল হোসেন, তারিফ সরদারের ছেলে মোফাজ্জেল হোসেন, পরান সরদারের ছেলে আব্দুল হামিদকে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত পান। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজে লোক নিয়োগের সময় আমি প্রত্যেক ইউপি সদস্যকে বিগত বছরগুলোতে যারা কাজে অনুপস্থিত ছিলো তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুনদেরকে সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের চাপে আমি আমার সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তিনি আরও জানান, আমি ৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিজে ঘুরে শ্রমিকদের অনুপস্থিত দেখে এসেছি। এবিষয়ে আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। এদিকে, কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইউনিয়নের সচেতন মহল।