আন্তর্জাতিক

‘প্রকাশ্যে সিগারেট টানা আমার সদ্য পাওয়া স্বাধীনতারই অংশ’; সৌদি নারী

By daily satkhira

February 17, 2020

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কেন্দ্রে একটি অভিজাত ক্যাফে। এর ভেতরে একটি চেয়ারে বসলেন রিমা। সতর্কতার সঙ্গে আশপাশটা একটু দেখে নিলেন। দেখলেন, পরিচিত কেউ আছেন কিনা। এরপর নিজের ইলেকট্রিক সিগারেটটা (ই-সিগারেট) বের করে ধরালেন।

চোখ বুজে একটা সুখটান মেরে মুখ থেকে ছাড়লেন ধোঁয়ার মেঘ। নারী স্বাধীনতা- বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নারী স্বাধীনতার এ অভিনব চল শুরু করেন সেসময়ের ডাকসাইটে নারীবাদী নেতারা। এবার সেপথে পা রাখলেন সৌদি নারীরাও। এখন রোববার সৌদির স্বাধীনচেতা নারীদের নিয়ে এ সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেছে এএফপি।

বছরখানেক হল একেবারে পশ্চিমা নারীবাদীদের মতোই প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন সৌদি নারীরা। রক্ষণশীল সৌদিতে এমন দৃশ্য কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়। হঠাৎ সামাজিক পরিবর্তনে দেশটির কিছু নারীকে ইদানীং সিগারেট, সিসা পাইপ তথা ধূমপান করতে দেখা যাচ্ছে।

এটাকে তারা ‘মুক্তির প্রতীক’ হিসেবে দেখছেন। রক্ষণশীল সৌদি নারীদের এমন আচরণ সম্পর্কে ভারতের খ্যাতনামা লেখক অরুন্ধতী রায় বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস পালন বা ধূমপান করাকেই নারী স্বাধীনতা বলে না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের মতো আচরণ করলেই নারীমুক্তি মেলে না। এগিয়ে যেতে হলে তাদের সচেতন হতে হবে।’ এবারই প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করেছেন সৌদি নারীরা। সেই সঙ্গে ধূমপানও করছেন প্রকাশ্যে।

রিয়াদের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ২৭ বছর বয়সী নারী রিমার মুখেও এটাকে নারী স্বাধীনতা বলতে শোনা গেল। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে সিগারেট টানা আমার সদ্য পাওয়া স্বাধীনতারই অংশ বলে মনে করি আমি। পছন্দের কাজটা করতে পারছি বলে আমি এখন সুখী।’

সৌদির বিভিন্ন শহরে বহু আগে থেকেই সিগারেট বা এজাতীয় দ্রব্য বিক্রি ও প্রকাশ্যে ধূমপান করা নিষিদ্ধ। তবে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে সারা সৌদিতে সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে ধূমপান শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য।

প্রকাশ্যে কাউকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখা গেলে ২০০ রিয়াল জরিমানা করা হয়। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অন্যান্য দেশের মতোই এখানেও ধূমপান একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সেটা কেবল পুরুষদের বেলায়।

বছর দুই হয় সিগারেট ধরেছেন রিমা। তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে তার কোনো বিকার নেই। তার ভয় যদি পরিবারের কেউ দেখে ফেলে। অবশ্য যদি এমন কিছু হয় সেটার জন্যও প্রস্তুত বলে জানালেন রিমা।

সৌদির স্বর্ণের অ্যামব্রয়ডারি করা ঐতিহ্যবাহী লম্বা ও কালো পোশাক আবায়া ও এর সঙ্গে মানিয়ে হিজাব পরিহিত রিমা বলেন, ‘আমি তাদের বলব না এটা আমার ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। কারণ তারা বুঝবে না যে নারীরাও পুরুষের মতো সিগারেট খাওয়ার মতো মুক্ত।’ রিমার পাশেই তার মতোই ২৬ বছর বয়সী আরেক নারী নাজলা বলেন, দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন সত্ত্বেও সমাজে এখনও অনেক ভণ্ডামি চলছে।

নারীদের ধূমপানকে এখানে এখনও ‘কেলেঙ্কারি আর অসম্মানের’ বলে বিবেচনা করা হয়। বলতে বলতেই ক্যাফেতে বসে থাকা বেশ কয়েকজন পুরুষের মধ্যেই সিগারেট জ্বালালেন। এরপর একটু ঔদ্ধত্যের সঙ্গেই বললেন, সমাজের এসব ভণ্ডামিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান তিনি।’

কট্টর রক্ষণশীল সৌদিতে ব্যাপক সংস্কারের সূচনার আগে এমন চিত্র ছিল অকল্পনীয়। পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইসরাইলের সঙ্গে জোর সম্পর্কের ওপর ভর করে সৌদি উচ্চাভিলাষী শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দেশকে মধ্যপন্থী ও ব্যবসাবান্ধব করে গড়ে তুলতে বেশকিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের সূচনা করেছেন।

তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন নানাভাবে সমালোচিত বিন সালমান। তারই অংশ হিসেবে দেশটিতে বিনোদন ও পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।