বিদেশ ডেস্ক: ইরানে করোনা ভাইরাসে শনিবার নতুন করে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় জনে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সরকারিভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আর ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২৯ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের বাইরে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ। মৃতদের সবাই ইরানি নাগরিক।
শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপুর জানান, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এদিন আরও ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে।
ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর প্রধান ডা. টেডরস আধানম গেব্রেয়াসাস। শনিবার তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডব্লিউএইচও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তবে এ অঞ্চলে ইরানেই প্রথম এ ভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো।
শনিবার রাতে মারকাজি প্রদেশের গভর্নর আলী আঘাজাদেহ বলেন, আরাক শহরে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। তার হার্টেরও সমস্যা ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোম, তেহরান ও গিলান প্রদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দুই ব্যক্তি কোমে মারা গেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে ওই শহর থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। শহরটিতে চীনা শ্রমিক রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি স্থানীয়দের দেহে প্রবেশ করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্তত ১১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে প্রথম এ ভাইরাস ধরা পড়ে গত ২৮ জানুয়ারি। তখন সফররত একটি চীনা পরিবারের চার সদস্যের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক। তবে আক্রান্তদের কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বা তারা দেশটির কোন কোন স্থানে গিয়েছিল সে সম্পর্কে মুখ খোলেনি আমিরাতি কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সরকারি হিসাবে, রবিবার পর্যন্ত দেশটিতে এ ভাইরাসে দুই হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও ৭৭ হাজার মানুষ। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইতোমধ্যেই হুবেই প্রদেশের রাস্তায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যক্তিগত যান চলাচল। ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাসের উপসর্গ গোপন করাকে ফৌজদারি অরপাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে চীনের একটি আদালত। একইসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করলে তার মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।