খেলার খবর: ব্যাট হাতে কাজটা করে রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, তামিম ইকবালরা। জিম্বাবুয়েকে রানের পাহাড়ে চেপে রেখেছিলেন তারা। সেটাকে ভিত্তি করে বোলিংয়ে ঘূর্ণি জাদুর প্রদর্শনী দেখালেন নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলামরা।
তাতে দিগ্ভ্রান্ত সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। চাপে মুষড়ে পড়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন তারা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৯ রানে গুটিয়ে গেলেন জিম্বাবুইয়ানরা। ফলে এক ইনিংস ও ১০৬ রানে জিতল বাংলাদেশ।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনিংস ও রানে জয়ের স্বাদ পেলেন টাইগাররা। এর আগে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারান তারা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত এ জয়ে টেস্টে হারের বৃত্ত থেকে বের হলেন মুমিনুল ব্রিগেড।
চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। ভূমিকাতেই ফেরেন কেভিন কাসুজা। মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি করে তাকে ফেরান তাইজুল। তাতে বিপদে পড়েন সফরকারীরা।
পরে ক্রেগ অরভিনকে নিয়ে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ ব্র্যান্ডন টেইলর। তবে বাদ সাধেন নাঈম। টেইলরকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান তিনি। নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে তাকে ফেরান ডানহাতি অফস্পিনার। ফলে আরো চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
এ অবস্থায় সিকান্দার রাজাকে নিয়ে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন অরভিন। দারুণ খেলতে থাকেন তিনি। অপর প্রান্ত থেকে ভালো সমর্থনও পান। ফলশ্রুতিতে জমে যায় তাদের জুটি। তাতে ধীরে ধীরে চাপ কাটিয়ে ওঠে জিম্বাবুয়ে।
তবে হঠাৎ ছন্দপতন। রান নিতে গিয়ে কাটা পড়েন অরভিন। ফেরার আগে ওয়ানডে মেজাজে ৪৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই চোখ রাঙাচ্ছিলেন সফরকারী অধিনায়ক। অসাধারণ থ্রোতে তাকে রানআউট করেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন মুমিনুল হক। তাতে রাজার সঙ্গে অরভিনের ভাঙে ৬০ রানের জোট।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি সিকান্দার রাজা। মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান বিশেষজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। সাজঘরে ফেরত আসার আগে ৩ চারে তিনি করেন লড়াকু ৩৭ রান।
অভিজ্ঞ ব্যাটার ফিরলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় জিম্বাবুয়ে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে লড়তে পারেননি রেগিস চাকাভা। তাইজুলের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। তাতে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সেই রেশ না কাটতেই প্রতিপক্ষ শিবিরে ছোবল মারলেন নাঈম। এবার যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন এন্সলে এনদিলোভু।
তাতে জয়টা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিকদের। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে টিমিসেন মারুমাকে ফিরিয়ে দেন নাঈম। ফেরার আগে ৫ চারে সংগ্রামী ৪১ রান করেন তিনি। আর তাকে শিকার বানিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট সংগ্রহ করেন টাইগার তরুণ অফস্পিনার।
জিম্বাবুয়ে শিবিরে সবশেষ পেরেকটি ঠুকেন তাইজুল। তাতে ইনিংস ও ১০৬ রানের জয়ের আনন্দে মাতেন মুমিনুল বাহিনী। তার নেতৃত্বে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে নাঈম ঝুলিতে ভরেন ৫ উইকেট। আর তাইজুল লাভ করেন ৩ উইকেট।
সিরিজের একমাত্র টেস্টে প্রথম ইনিংসে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ৫৬০ রান তোলে বাংলাদেশ। ফলশ্রুতিতে ২৯৫ রানে পিছিয়ে থেকে সোমবার শেষ বিকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন জিম্বাবুইয়ানরা।
তবে শুরুটা শুভ হয়নি তাদের। সূচনালগ্নেই হোঁচট খান তারা। দলীয় ৯ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। খানিক ব্যবধানে দ্রুত ফেরেন প্রিন্স মাসভাউরে ও ডোনাল্ড তিরিপানো। দুজনকেই সাজঘরে ফেরান নাঈম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৬৫/১০ (অরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪; আবু জায়েদ ৪, নাঈম ৪)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৬০/৬ ডিক্লে. (মুশফিক ২০৩*, মুমিনুল ১৩২, শান্ত ৭১, লিটন ৫৩; এনদিলোভু ২)।