আশাশুনি

মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া বিমান ঢালী আজও স্বীকৃতি পাননি

By daily satkhira

February 25, 2020

আসাদুজ্জামান ঃ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, করেছিলেন সার্বিক সহযোগিতা এমন মানুষদের মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনির সুপরিচিত একটি নাম বিমান বিহারী ঢালী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তাই তার বৃদ্ধা মায়ের আকুতি মৃত সন্তানের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি টুকু যেন তিনি দেখে যেতে পারেন। বিমান ঢালী আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের মৃত জীতেন্দ্র নাথ ঢালী ওরফে হাজরা ঢালীর ছেলে। ধনী পিতার সন্তান বিমান ঢালীর বামনডাঙ্গা গ্রামে দ্বিতলা পাকা বিল্ডিংএ স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করেন। জীবনের চরম ঝুকি নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। যুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি তার বিশাল বাড়ি ছেড়ে হেতাইলবুনিয়া (কাজলনগর) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন এবং ০৯ নং সেক্টরে বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধে সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অংশ গ্রহন করেন। ক্যাম্পের প্রশিক্ষক (গেজেট নং ৪১০, লালমুক্তিবার্তা নং ০৪০৪০৫০১৫৭) জি এম আঃ গনির কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহন ও রণাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন মর্মে প্রত্যয়নপত্রও পান। স্বীকৃতি স্বরূপ ০৯ নং সেক্টরের আঞ্চলিক অধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর সনদপত্রও প্রদান করা হয়েছিল। যার ক্রমিক নং ১৬৯২৪৬। কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হননি। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেন, কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের আগেই ২০১৬ সালে ২২ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার ছেলে নিত্যানন্দ ঢালী তার পিতার স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধা বিমান ঢালীর মাতা সুশীলা রাণী ঢালী বৃদ্ধা বয়সে চোখের জল ফেলে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ৭১ সালে রাজাকার, পিচ কমিটি, আল বদর ও পাকিস্তানী হায়েনাদের নির্যাতন ও গুলির মুখে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ভারতে চলে গেলেও ছেলে বিমান ঢালী দেশ স্বাধীনের জন্য আমাদের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে। কেয়ারগাতি ও গোয়ালডাঙ্গা যুদ্ধে মুক্তিফৌজদের সার্বিক সহায়তা, গোলাবারুদ ও খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে। দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে দেখি আমার পুত্র বিমান বিজয়ী বেশে বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু সে সময় তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে সে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করে, কিন্তু তার জীবদ্দশায় সে স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেনি। আর তাই বিমান ঢালীর গর্বিত বৃদ্ধা মাতা সুশীলা রানী জীবনের শেষ সময়ে এসে তার বীর সেনা ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করে যোগ্য স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য সরকারে কাছে আহবান জানিয়েছেন।