অর্থনীতি

সচিবালয় থেকে জেলা শহর; সরকারি অফিস-আদালতে পাপিয়াদের দাপট!

By Daily Satkhira

February 26, 2020

দেশের খবর: যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। নিজেকে পরিচয় দিতেন ক্ষমতার রাঘববোয়ালদের কর্মী হিসেবে।অল্প দিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। দেশে-বিদেশে গড়েছেন বিপুল সম্পদ।সারা দেশ থেকেই পাপিয়াদের রাজনীতিতে দাপটের খবর আসতে শুরু করেছে। একই ধরনের মেকআপ-গেটআপ নিয়ে ওরা ঘুরে বেড়ায় ঢাকার সচিবালয় থেকে শুরু করে জেলা শহরের সরকারি অফিস-আদালতে। অনেকের রয়েছে তদবির বাণিজ্য। এসকল পাপিয়াদের দাপটের কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ ও সেবাগ্রহীতারা। সরকারি অফিস-আদালতে পাপিয়াদের প্রভাবের কাছে অনেকেই নতি স্বাীকার করেন।

আবার প্রভাবশালী কিছু নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সচিবালয়ে দিনভর ঘুরে বেড়ানোর। তাদের যন্ত্রণায় অনেক সময় মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা কাজ করতে ঝামেলায় পড়েন। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সচিবদের দরবারেও তাদের দেখা যায়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখানে একজন নেত্রী রয়েছেন যিনি ঢাকার জাতীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে বেড়ান। আর কক্সবাজারে এসে সবাইকে ক্ষমতার দাপট দেখান। একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম-সিলেটসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকেও। সহযোগী সংগঠনের পদ বাগিয়ে তারা করে চলেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য। ঢাকায় অনেক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ২০-২৫ জনকে নিয়ে কেউ কেউ প্রবেশ করেন। সঙ্গে অনেকের পাসও থাকে না। এ নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হামেশা ঝামেলা হয়। কিন্তু কারও কথা শোনার সময় নেই তাদের। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ধরা খাওয়ার পর আরও অনেকে মুখোশ খোলার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। এমনকি রঙিন জগতের যারা, নেতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান তাদের মধ্যেও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

অনেক পড়তি নায়ক-নায়িকা এখন একই কাজে ব্যস্ত। সিনেমা, নাটক, গান বাদ দিয়ে ওরা ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নেতাদের বাড়ি বাড়ি। এ ছাড়া সংগঠনের নামেও অনেক কা-কীর্তি ঘটছে যা ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ন করছে ক্ষমতাসীন দলের। অনেকের কা-কীর্তি ঢাকা শহরের সবাই জানেন। এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অনেকের ফাইল রয়েছে। তার পরও তাদের অবস্থান বদল হচ্ছে না। বরং ক্ষমতার ধারেকাছে ঘেঁষতে অনেকে দৃষ্টিকটুভাবে ঘুরে বেড়ায়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, পাপিয়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আমাদের খোঁজ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে এ সিন্ডিকেটের মতো আরও কোনো চক্র সক্রিয় আছে কিনা সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চলছে। সে যে-ই হোক না কেন, কারও ছাড় নেই। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাপিয়াকে যাতে কোনোভাবেই গ্রেফতার না করা হয় সেজন্য ওপরমহলের অনেকেই ফোন করেছেন। তবে সবুজ সংকেত পেয়েই পাপিয়াকে গ্রেফতারের পর রহস্যজনকভাবে থেমে যায় তাদের তদবির। একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে সব প্রভাবশালীর সঙ্গে পাপিয়ার সম্পর্কের মাত্রা। তিনি আরও বলেন, ওই প্রভাবশালীদের সঙ্গে পাপিয়ার ফোনালাপের রেকর্ডও এখন তদন্তসংশ্লিষ্টদের হাতে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই ব্যক্তিরা পাপিয়ার কাছ থেকে কীভাবে সুবিধা নিয়েছেন। তাদের কেউ ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ গ্রেফতার চারজনকে তিন মামলায় পাঁচ দিন করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ওরফে পিউদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে অনেক পিলে চমকানো তথ্য। বেরিয়ে আসছে অনেকের নাম। তদন্তে উঠে আসছে, অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে পিউর বিশেষ সম্পর্ক এবং ব্যবসার বিষয়টিও। ইতিমধ্যে র‌্যাব পিউর ঢাকার বাসা, অফিস এবং নরসিংদীর বাড়ি থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করেছে। এর কিছু তথ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, পাপিয়াকে নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কারণ, পাপিয়াকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কারা বিভিন্ন কমিটিতে বড় পদ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছেন এবং কারা পাপিয়ার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এর সব তথ্য এখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। কীভাবে পাপিয়ার উত্থান হয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে। তবে এরই মধ্যে পাপিয়া অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের নাম বলেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ওরফে মতি সুমনকে তিন মামলায় মোট ১৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ছাড়া অপর দুই আসামি সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে বিমানবন্দর থানার মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।