শ্যামনগর ব্যুরো : শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাতাখালীর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু বহু অপকর্মের হোতা রাসেল হোসেন ওরফে গাজী রাসেল আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়া অর্ধ্ব ডজন মামলার এ আসামী বর্তমানে পদ্মপুকুর এলাকার মুর্তিমান আংতঙ্কে পরিনত হয়েছে। তার নানামুখী অপতৎপরতায় আইয়া বিধ্বস্ত উপকুলীয় জনপদের সাধারন ও নিরীহ মানুষ রীতিমত ভিতী সন্ত্রস্থ হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে রাসেল বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে “টু” শব্দটি করার সাহস ও শক্তি পর্যন্ত হারিয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে ভুক্তোভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে। ২০০৫ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে পর পর দুটি মামলায় পুলিশের খাতায় প্রথম নাম লেখানো গাজী রাসেল (৩৫) পাতখালী গ্রামের আব্দুর রউফ গাজীর ছেলে। সে একাধিকবার গ্রেফতার পরেও বার বার জামিনে এসে একাধারে পুরানো অপকর্ম অব্যাহত রাখায় বর্তমানে স্থানীয়রা তার অপরাধমুলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে গাজী রাসেল গোটা এলাকাজুড়ে একটি আতংকের নাম। মাদক সেবন ও ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখলবাজি, চিংড়ি ঘেরসমুহে লুটতরাজ চালানো তার নিত্যকার কাজ। গত দেড় দশকেরও বেশী সময় ধরে শত শত এমন ঘটনা ঘটালেও প্রভাবের কারনে গোপনে কিছু সাধারন ডায়েরী হলেও মাত্র পাঁচটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ পেয়েছে ভুক্তোভোগীরা। রাসেলের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বীয় নাম প্রকাশ না করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে পাখিমারা গ্রামের এক যুবক জানায়, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলবে না। মুখ খুললে তার কপালে খারাপ কিছু আছে। ওই যুবক আরও জানায় রাসেল ‘বাবা’ (ইয়াবা) খায় এবং ব্যবসাও করে। যদিও এলাকার একজন দাপুটে সন্ত্রাসী হিসেবে গোটা জনপদজুড়ে রাসেলের ব্যাপক নাম-ডাক রয়েছে বলে তিনি জানান। পাশে দাড়ানো আজিজুল নামের এক ব্যক্তি জানায় রাসেল তার সহযোগীদের মাধ্যমে পাতাখালীসহ আশপাশের এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দাবিকৃত চাঁদা না পেলে রাসেল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নানাভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে হয়রানী করে। এমনকি চিংড়ি ঘেরের আটল ঝেড়ে দাবিকৃত চাঁদা ‘উসুল’ করার মত ঘটনা পর্যন্ত গাজী রাসেল ঘটায় বলে তার দাবি। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অমল মন্ডলের বাড়ির সোলারের প্যানেল চুরি করার সময় বাহিনী প্রধান রাসেল স্থানীয়দের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছে বলে জানান পাতাখালী গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও মোবরক গাজী। অভিযোগ রয়েছে এলাকার চুরি, ছিনতাইসহ দখলবাঁজির যাবতীয় ঘটনার নেতৃত্ব দেন রাসেল হোসেন ওরফে গাজী রাসেল। নিজে মাদক সেবনের পাশাপাশি উপকুলবর্তী পদ্মপুকুর এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও এখন তার হাতে। চিংড়ি চাষী হিসেবে পরিচয় দিলেও চাঁদাবাজি তার প্রধান কাজ বলে দাবি স্থানীয়দের। বর্তমানে সে পদ্মপুকুরের বিভিন্ন এলাকার বিরোধপুর্ন জমি নিজ ক্যাডার বাহিনী দিয়ে দখল করে স্থানীয়দের কাছে ভুমিদস্যু হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে রাসেলের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ২০০৫ সালে ৩১ মার্চ শ্যামনগর থানায় চাঁদাবাজিসহ মারধর ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি মামলা (যার নং ৬৬) হয়। পরবর্তীতে ওই বছর অক্টোবর মাসে আরও একটি চাঁদাবাজির ঘটনায় রাসেল এর বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় দ্বিতীয় মামলা (যার নং ২৪) রুজু হয়। পরপর দুটি মামলার আসামী হওয়ার পাশাপাশি উভয় মামলায় গ্রেফতারের পর জামিনে বের হয়ে আসা রাসেল পরবর্তীতে আর পিছনে ফিরে তাকায়নি। সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে নিজস্ব একটি বাহিনী গড়ে তুলে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে রাসেল উপকুলবর্তী ওই দ্বীপ এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি বনে যায়। বর্তমানে নিজস্ব বাহিনীর উপর ভর করে রাসেল আত্মপ্রকাশ করেছে এলাকার অন্যতম ভূমিদস্যু হিসেবে। বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হলেও সাধারন মানুষ রাসেলের আক্রোশ থেকে রেহাই পেতে কখনও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। যার ফলে রাসেল দিনে দিনে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও আরও নানান অপকর্মের পাশাপাশি বর্তমানে সে এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুতে পরিনত হয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের। জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তোয়াক্কা না করা রাসেল এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কখনও তাকে হাজির করা যায়নি বলে অভিযোগ অনেক ভুক্তোভোগীর। জানা গেছে একের পর এক অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে ২০১২ সালে (মামলা নং-৭০), ২০১৩ (মামলা নং ০৩) ও ২০১৯ সালে (মামলা নং ১৫) আরও তিনটি মামলা হয় দুর্র্ধর্ষ্য রাসেলের বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবি, আটকে রেখে মারধর, চাঁদা আদায়সহ নানা অভিযোগে দায়ের করা এসব মামলায় পাঁচ বার কারাগারে গেলেও কখনও তাকে দমানো যায়নি। বরং প্রতিবারই জেল থেকে বের হয়ে এসে রাসেল আরও বেপরোয়া আচারণ শুরু করে প্রতিপক্ষের নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতি ও হয়রানী করে। ফলে তার অত্যাচার নির্যাতন থেকে দুরে থাকতে বর্তমানে অনেকেই রাসেল বা তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করা দুরে থাক, ‘উহফ’ শব্দটি পর্যন্ত করতে সাহস পায় না। জানা গেছে সম্প্রতি রাসেল ও তার লোকজন কালিকাপুর গ্রামের আলহাজ¦ বাবর আলী গাজী নামের এক চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। পাতাখালী মৌজায় থাকা নিজের পৈত্রিক জমির লিজের টাকা দাবি করায় ঘের মালিকের পক্ষে রাসেল জমির মালিককে হুমকি দিয়ে তাৎক্ষনিক ঐ এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। এ ঘটনায় হয়রানী ও হুমকির শিকার বাবর আলী গত ২৬ ফেব্রুয়ারী শ্যামনগর থানায় ১২২৩ নম্বরের একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া নামের কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, পাতাখালী মৌজায় প্রায় পঁচিশ বছর পুর্বে ক্রয়কৃত তার আট বিঘা জমি দখল করে দিয়েছে রাসেল। তবে শুধু আলহাজ¦ বাবর আলী বা কাশিমাড়ী গ্রামের ড. অধ্যাপক ইয়াহিয়া নয় বরং স্থানীয় অনেকের অভিযোগ রাসেল এর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী দুর্র্ধর্ষ্য এই সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুর কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রাসেল হোসেন ওরফে গাজী রাসেল জানায় বিভিন্ন মামলা আমার নামে থাকলেও এখন আর এধরনের কাজ করি না।