ফিচার

রিমান্ডে পাপিয়া যুব মহিলা লীগের ৩ নেত্রীসহ যাদের কথা বলেছেন

By Daily Satkhira

February 28, 2020

রাজনীতির খবর: যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা কমিটির বহিস্কৃত সাধারণ শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ১৫ দিনের পুলিশি রিমাণ্ডের প্রথমদিনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তার স্বীকারোক্তিতে অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন পাপিয়া, সেইসব গডফাদার ও গডমাদারদের খুজতে অভিযান শুরু করেছে।

পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনসহ গ্রেফতার চারজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যাচাই-বাছাইয়ের পর অন্তত ১৫ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করছেন গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে রয়েছেন যুব মহিলা লীগের তিন প্রভাবশালী নেত্রী। সন্দেহভাজনদের রাখা হয়েছে নজরদারিতে। তারা কোথায় যাতায়াত করেন, কাদের সঙ্গে সময় কাটান এসব বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। পরবর্তী সময়ে তাদের প্রত্যেকের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবেদন ঠানো হবে সরকারের শীর্ষ মহলে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এক সাংসদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া। ওই তিনজনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার।

গোয়েন্দারা সরেজমিন প্রতিবেদনে জানান, পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাটে প্রায় রাতেই ককটেল পার্টি বসত। সেখানেও আনাগোনা ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির। পরে সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী সুন্দরী যুবতীদের নিয়ে যেতেন তারা।

সুত্র জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের জন্য পাপিয়ার কাছে সুন্দরী নারী চাইতেন ক্যাসিনো অভিযানের সময় গ্রেফতার টেন্ডার মাফিয়া জি কে শামীমসহ আরও কয়েকজন টেন্ডারবাজ। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুন্দরীদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে। ওই সুন্দরীদের মাধ্যমে টেন্ডারবাজরা হাসিল করে নিতেন বড় বড় টেন্ডার। পাপিয়া ওই সুন্দরীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ কিংবা অন্যান্য সামগ্রীতে পাপিয়া কৌশলে লাগিয়ে দিতেন অত্যাধুনিক ডিভাইস। সেই সব ডিভাইসে ধারণকৃত মনোরঞ্জনের দৃশ্যগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতেন লেডি মাফিয়া পাপিয়া। এ ছাড়া হাই সোসাইটির খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী পাপিয়া তার সংগ্রহে রাখতেন রুশ ও থাই সুন্দরী নারী। চাহিদা ও রেট মিলে গেলে পাপিয়া তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতেন।

পাপিয়াকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া যুব মহিলা লীগের তিন নারীনেত্রীর বিষয়ে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এরাই তাকে রাজনীনিতে প্রবেশ ও বড় পদ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের মাধ্যমেই অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া পাপিয়ার কললিস্টে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তার নাম পাওয়া যাওয়ায় অনেকটাই বিব্রত বোধ করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন বলেন, প্রতিটি বিষয় আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তবে আমরা বুঝতে পারছি, পাপিয়া অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, ইন্ধনদাতার তালিকায় কারা, তার অর্থের উৎস কী, একই সঙ্গে তার অপরাধ কর্মকাণ্রডে তালিকা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা থাকবে।’

বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কায়কোবাদ কাজী গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার অপরাধজগৎ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। মূলত যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক নারী সাংসদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকান্ড ও চাঁদাবাজি করতেন।

পপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, আমরা তাকে (পাপিয়া) গ্রেফতার করেছি। কিন্তু আদালতে হাজির করার কারণে অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রাথমিকভাবে সম্ভব হয়নি। বিস্তারিত জানতে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।

প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ, স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

পরদিন সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।