নিজস্ব প্রতিনিধি : এ যেনো সোনার হরিণ। ‘হাতে তার এক লাখ টাকা’ একথা অনুভবে জেনেই অন্ধ চোখ দুটি ছল ছল করে উঠলো। সাথে থাকা স্ত্রীও ফেললেন আনন্দ বেদনা মিশ্রিত অশ্রু। শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত অফিসে এমনই এক আবেগঘন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। টাকা হাতে পেয়েই জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলরাম চন্দ্র দাস (৪৮) বলেন ‘আমি ও আমার পরিবার চিরদিনের মতো কৃতজ্ঞ থাকলাম’। এই টাকা তিনি আয়বর্ধক খাতে ব্যবহার করে পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। বলরাম বরগুনা জেলার আমতলি উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালি গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের প্রধান। তার মা শান্তিরানী দাস (৭৫) , মেয়ে দীপা রানী দাস (১৬) ,ছেলে সৌরভ দাস (১৩) এবং তিনি নিজে জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পরিবারের ছয় সদস্যের অপর দুইজন তার স্ত্রী শান্তি রানী ও ছোট মেয়ে সঙ্গীতা সুস্থ রয়েছেন। তার বড় মেয়ে দীপা এবার অন্ধ স্কুল থেকে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। ছেলে সৌরভ অন্ধ স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র। সঙ্গীতা পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯৭৩ সালে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া এক একর ১৩ শতক জমির একাংশে বলরাম পরিবারের বসত। এর পেছনে অপর অংশের সরকারি জমিতে তিনি ও তার মামা পানের বরজ করে এবং প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েই সংসার নির্বাহ করে আসছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল এই জমি তার পৈতৃক দাবি করে সম্প্রতি তার সহযোগীদের নিয়ে বরজটি ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তার উদ্দেশ্য বলরামকে তার বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা। শিবু ও তার সহযোগীদের ভয়ে বলরাম পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে সাহস করেন না। তারা নিজ ঘরেই বন্দী হয়ে পড়েছেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে এ বিষয়ে আমতলি প্রতিনিধির পাঠানো ‘একই পরিবারের চারজন অন্ধ,মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিতে চায় ভূমিদস্যুরা’ শীর্ষক একটি সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্ট দেখে একজন ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন। তিনি বাংলাদেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে এক লাখ টাকা পাঠান সাতক্ষীরার বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের কাছে। বুধবার রাতে বলরাম ও তার স্ত্রী যুগান্তরের আমতলি প্রতিনিধি জসিমউদ্দিন সিকদারের সাথে সাতক্ষীরা পৌছালে রাতে পরিবারটির হাতে তুলে দেওয়া হয় ওই টাকা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরী, দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ,সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের আমতলি প্রতিনিধি জসিমউদ্দিন সিকদার, দৈনিক পত্রদূতের বার্তা সম্পাদক শহিদুল ইসলাম , রিপোর্টার আবদুস সামাদ প্রমূখ। টাকা হাতে পেয়ে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় আমতলি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পরভিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘ তার জমির বিষয়ে তদন্ত চলছে। বলরাম পরিবারের সামাজিক সুরক্ষায় সব ধরনের আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হবে’।