প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ র্যাফেল ড্র'র টিকিট

তালা

তালায় অবৈধ লটারি চলছেই ; এ যেন হীরক রাজার দেশ!

By Daily Satkhira

April 20, 2017

এম বেলাল হোসাইন : এ যেন হীরক রাজার দেশ! নৈতিকতা, আইন, প্রশাসনের ভাবমূর্তি কোন কিছুর পতিই কারও তোয়াক্কা নেই। আছে শুধু দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া র‌্যাফেল ড্র’র আড়ালে অসুস্থ লটারি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পাচ্ছে না কোন মূসক, মানা হচ্ছে না নীতিমালা, উপেক্ষা করা হচ্ছে এইচএসসি’র মত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। এক মাসেরও অধিককাল পর করে মেলার মোলিক উদ্দেশ্যকে পায়ে ঢেলে চলছে অবৈধভাবে অর্থ লুণ্ঠনের খেলা। কথা হচ্ছে তালা উপজেলার তেঁতুলিয়ায় কবি সিকান্দার আবু জাফরের ৯৮তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলা নিয়ে। এ মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য আর মেলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে অনৈতকতার চর্চা চলছে তা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বরং চলছে এসব। গত পরশু রাতে অনুষ্ঠিত র‌্যাফেল ড্র’য় পুরস্কার জিতিছেন স্বয়ং তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সম্পূর্ণ অবৈধ এই র‌্যাফেল ড্র’য় তার অংশ নেয়ার কোন সুযোগ না থাকলে তিনি বলছেন, এমনিই টিকিটি কটেিেছলেন! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক জানাচ্ছেন, সাতক্ষীরার গর্ব কবি সিকান্দার আবু জাফরের ৯৮ তম জন্মজয়ন্তী পালনের আড়ালে সেখানে সাধারণ জনগণের পকেট কাটার মহা উৎসব। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তালা ও এর আশপাশের পরিবেশ। দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ দিনের স্বল্প আয়ের একটি বড় অংশ কার্যত এই র‌্যাফেল ড্র নামক প্রকাশ্য জুয়ায় ব্যয় করছে। ২০ টাকায় নতুন মটরবাইক পাওয়ার আশায় প্রতিদিন লাটারির টিকিট কেটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষই লটারি নামক ধোকার শিকার হচ্ছেন। তবে এ মেলার টিকিট শুধু সাধারণ মানুষই ক্রয় করেছেন তা নই। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুল ইসলামও টিকিট ক্রয় করেছিলেন(!)। তিনি অবশ্য মটরসাইকেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানা গেছে। পুরস্কার জেতার কথা স্বীকার করে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুল ইসলাম বলেন, সবাই লাটারি কেটেছে। আমিও আনন্দ করে কটেছি। তাছাড়া আর কিছুই না। মেলার খরচ তোলার জন্য এখানে লটারি চলছে। এখানে কোন নগ্ন নৃত্য, জুয়া বা অন্য কিছুই হচ্ছে এমন প্রমান দিতে পারলে মেলা সেইদিনই বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর এবিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সচিবের সাথে যোগাযোগ করেন। এদিকে শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব শেখ মোশফিকুর রহমান মিল্টন বলেন, মেলার প্রধান সমন্বয়ক হলেন ইউএনও সাহেব। আমি তো শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করছি মাত্র। আর সেখানে পরিচ্ছন্ন মেলা হওয়ার কথা। যদি কোন অপ্রীতিকর কিছু হয় সেটা বন্ধ করা উচিত। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন জানান, সেখানে কোন অশ্লীল কিছু পরিবেশন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। আমি খোঁজ নিয়েছি সেখানে অশ্লীল কোন কিছু হচ্ছেও না, তবে তিনি অবৈধ লটারি ব্যাপারে বরাবরের মত বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফূলাহর গত ১৬ এপ্রিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি সাতক্ষীরার এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের ফেসবুক লিংকে লিখেছেন ‘শুধু বন্ধ নয়, তদন্ত পূর্বক এর বিচার করা উচিৎ।’ উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে একাধিকবার এধরনের অবৈধ লটারির টিকিট বিক্রির সময় জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বন্ধ করে দিলেও বর্তমানে এর কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহ আছে বলেও জনগণ মনে করছেন না। এ যেন হীরক রাজার দেশ!