স্বাস্থ্য ডেস্ক: নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০২০ সালের ৩ মার্চ সোমবার দিবাগত রাতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে লোকজনের প্রতি নোটের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিকল্প বলতে নোটের বদলে ‘কন্টাক্টলেস পেমেন্ট’-এর কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, সংক্রমণ এড়াতে লোকজনের উচিত যেখানে সম্ভব যোগাযোগহীন প্রযুক্তি বা কন্টাক্টলেস টেকনোলজি ব্যবহার করা।
ব্যাংক নোট স্পর্শ করার পর লোকজনকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কেননা, এসব নোটে কয়েক দিন পর্যন্ত মানব দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মতো উপাদান থাকতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ও নোটগুলো ‘ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বহন করতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে। তাদের তরফে লোকজনকে নিয়মিত হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দিনে দুই বার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডগুলোও মুছে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এতে করে কার্ডগুলোতে জমে থাকা জীবাণু মেরে ফেলা সহজ হবে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাংক নোটের জীবাণু নাশে উদ্যোগী হয়। আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রাখার পাশাপাশি ব্যবহৃত ব্যাংক নোটগুলোও বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। জীবাণু নাশের জন্য অতি বেগুনী আলো বা উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে ১৪ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের পর এসব নোট ফের বাইরে ছাড়া হয়।
৩ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। চীনের পর সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ইতালি ও ইরানের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রেও অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার মানুষ। আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগই চীনের নাগরিক।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাসখানেক আগে তারা ঠিক এই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছিল। তখন তারা জানিয়েছিল, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিতে ভাইরাস ছড়িয়ে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এখন দৃশ্যত পরিস্থিতি সেদিকেই মোড় নিচ্ছে। আর এটা ঠেকানো না গেলে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় দুঃসময়!
এদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে বদলে যেতে শুরু করেছে মানুষের অভিবাদন জানানোর অভ্যাস। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কর্মস্থল, বাড়ি ও প্রার্থনার জায়গায় মানুষ করমর্দন, আলিঙ্গন ও গালে চুমু দেওয়ার মতো অভ্যাস বাদ দিচ্ছে। এর বদলে সরাসরি দৃষ্টি বা হাত দিয়ে ইশারায় অভিবাদন জানানো শুরু হয়েছে।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে মানুষকে করমর্দন না করতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ক একটি নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, করমর্দনের বদলে নিজেদের দুই হাত একত্রিত করে অভিবাদন জানাতে। মাইক ও লাউড স্পিকারে বলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গং শো ভঙ্গি দেখিয়ে অভিবাদন জানানোর জন্য। এই রীতি অনুসারে, বিপরীত হাতে তালুতে মুষ্ঠি রাখা হয়।
ফ্রান্সে দৈনিক পত্রিকায় পাতায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে গালে চুমু ও কাজে সাধারণ আনুষ্ঠানিকতা করকমর্দনের বদলে কীভাবে প্রতিদিন অভিবাদন জানানো যাবে। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ ফিলিপ লিখটফুসের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বলছেন, করমর্দন মধ্যযুগে শুরু হওয়া অভিবাদনের ধরণ। সাধারণভাবে মানুষের চোখে তাকানোই অভিবাদনের জন্য তা যথেষ্ট।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাগরিকদের লাতিন আমেরিকার পানীয় পানের সময় ধাতব স্ট্র একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সিহফার দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ম্যার্কেল করমর্দন করতে হাত বাড়ালে তিনি হেসে নিজের হাত দুটো নিজের কাছেই রাখেন। এ সময় চ্যান্সেলরও হেসে উঠেন। আসন গ্রহণের আগে ম্যার্কেল তার হাত আকাশের দিকে উঁচু করে নেন।
ইরানে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পাঁচ বন্ধুকে দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে তিন জনের হাত পকেটে রাখা এবং দুই জনের মুখে মাস্ক পরা। তারা অভিবাদন জানাতে একে অন্যের পায়ে টুকাটুকি করছে। লেবাননেও এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে মুখে চুমুর ভঙ্গি করে সংগীতশিল্পী রাগেব আলামা ও কৌতুক অভিনেতা মাইকেল আবু স্লেইমান একে অন্যের পায়ে টুকাটুকি করছেন। সূত্র: দ্য সান, আল জাজিরা।