খেলা

অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন মাশরাফি

By Daily Satkhira

March 05, 2020

খেলার খবর: শুক্রবার শেষবারের মতো অধিনায়ক হিসেবে ২২ গজে নামবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বৃহস্পতিবার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচক ও বোর্ডকে এক অর্থে চ্যালেঞ্জই দিলেন মাশরাফি! শুক্রবার অধিনায়ক মাশরাফির অধ্যায় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড় মাশরাফির তাহলে পুনর্জন্ম হতে চলেছে! বিসিবি সভাপতি থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম বেশ কিছুদিন ধরেই মাশরাফিকে অধিনায়কত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করে আসছিলেন। অধিনায়কত্বের কারণে দলে ‘অটোমেটিক চয়েস’ মাশরাফি এখন নির্বাচকদের কোর্টে বল ঠেলে দিলেন। বহু চ্যালেঞ্জ জয়ী মাশরাফি অপেক্ষায় নতুন এই চ্যালেঞ্জ জেতার।

গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কাছে সেমিফাইনালে হেরে শেষ হয়েছে মাশরাফির ঢাকা প্লাটুনের বিপিএল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়কত্ব ও অবসর নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে মাশরাফি পাল্টা প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘আমি কার কাছ থেকে অবসর নেবো?’ ওই সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির কাছে আরও একটি প্রশ্ন আসে, অধিনায়কত্ব না ছেড়ে কি নির্বাচকদের চ্যালেঞ্জ করতে পারেন আপনি? ওই প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেছিলেন, ‘জাতীয় দল নির্বাচনের আগে অধিনায়ক নিয়ে ভাবে না নির্বাচকেরা। আমি তো পরিষ্কার বলেছি যে নির্বাচকেরা যা ভাববেন তাই হবে। বাংলাদেশে তো সবই হয়। তবে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা যদি বিসিবি বলে, আমি ছেড়ে দেবো।’

অবশেষে সত্যিই মাশরাফি বিসিবির কথায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে বিসিবি প্রধান স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ৮ মার্চ বোর্ড সভায় নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হবে। মাশরাফি চাইলে সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে পারবেন, সেক্ষেত্রে মাশরাফিকে ফিটনেস ও পারফরম্যান্স দিয়েই দলে আসতে হবে।

মাশরাফি বোর্ড প্রধানের দেওয়া সেই চ্যালেঞ্জটা ভালো করেই নিলেন। শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটিতে শেষবারের মতো টস করতে নামবেন। তবে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেও অবসর নিচ্ছেন না । দলের অংশ হয়ে থাকারই ইচ্ছে তার, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেই হবে অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। তবে খেলা চালিয়ে যাবো আমি। খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করব। আজ সকালেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পেশাদারিত্বের জায়গা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত আমার।’

২০১০ সালে দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু হাঁটুর চোট তাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি। ২০১৪ সালে দলের ভীষণ দুঃসময়ে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বদলে দেন জাতীয় দলকে। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল আর পরের বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ খেলেছে মাশরাফির নেতৃত্বে। পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় তো আছেই। অধিনায়কত্বের বড় দায়িত্ব তাকে দেওয়ায় বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান মাশরাফি, ‘আমার প্রতি এত দীর্ঘসময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই আমার নেতৃত্বে যারা খেলেছে বাংলাদেশ দলে, তাদের। হাথুরুসিংহে, খালেদ মাহমুদ, স্টিভ রোডস এবং আমার মনে হয় ডমিঙ্গো দিয়ে শেষ হচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ডের স্টাফ থেকে শুরু করে যারা আছেন, তাদের ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ জানাই সহযোগিতা করার জন্য। সবশেষে বাংলাদেশের সমর্থক, ভক্তদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কালকের ম্যাচের মাধ্যমে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’

মাশরাফি এখন পর্যন্ত ৮৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৮৭ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে জয় পেয়েছেন ৪৯টি। শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের হাফসেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন। এই ম্যাচে জিতলেই অধিনায়ক মাশরাফির জয়ের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ হবে। এমন একটি দিনেকেই মাশরাফি বেছে নিলেন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার দিন হিসেবে।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি গত বিশ্বকাপের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন। অবশ্য অবসর নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগ থেকেই। সেই আলোচনা ডালপালা মেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে। লর্ডসের ম্যাচ শেষে মাশরাফি জানিয়েছিলেন দেশে গিয়ে অবসরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিগত আট মাসেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মাশরাফি। বোর্ড ও মাশরাফির বিচ্ছিন্ন বক্তব্যের কারণে সংবাদমাধ্যম স্পষ্ট কোনও ধারনা পাচ্ছিল না। অবশেষে বৃহস্পতিবার মাশরাফি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভক্ত, সংবাদমাধ্যম ও বোর্ডকে স্পষ্ট বার্তা দিলেন। এখন একজন সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবেই তিনি ম্যাচ খেলবেন। অধিনায়কত্বের তকমা ছেটে ফেলে মাশরাফির টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে পারফরম্যান্স। সেটা দিয়েই তিনি জাতীয় দলে আরও কিছুদিন খেলার চ্যালেঞ্জটা নিলেন।

৮ মাস পর ২২ গজে ফিরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা প্রথম দুটি ম্যাচে খুব খারাপ করেনি। প্রথম ম্যাচে ৬.১ ওভার বোলিং করে ৫.৬৭ ইকোনমিতে ৩৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। ওই ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বোলিং অবশ্য তার চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পেস আক্রমণে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। এ ম্যাচে ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন। অন্য দুই পেসারের মধ্যে এক উইকেট পাওয়া শফিউল দিয়েছেন ৭৬ রান এবং আল আমিন ৮৫ রান।