খোলা মত

আকাশলীনা ইকোট্যুরিজমের প্রেক্ষাপট ; বন নির্ভরশীলতা হ্রাস, রাজস্ব আয় ও মানুষের স্বপ্ন যাত্রা

By Daily Satkhira

April 20, 2017

গাজী আল ইমরান, শ্যামনগর : আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম যেন অগণিত সুন্দরের কলিতে ফোটা একটি ফুল। পূর্বে স্থানটি ছিল নদীর চর, যে স্থানটি বিন্দু মাত্র মূল্য ছিলনা মানুষের কাছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ পর্যটকদের কাছে স্থান পেয়েছে বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসাবে। স্থানটির মাধ্যমে সরকার পাচ্ছে রাজস্ব আর শ্রমিকের সূযোগ হয়েছে কর্মসংস্থানের, পর্যটকেরা মিটাতে পারছে তাদের মনের খোরাক। বাংলাদেশের একেবারেই দক্ষিণে অবস্থিত শ্যামনগর উপজেলা। সুন্দরের চাদরে মোড়ানো শ্যামনগর পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা। পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনাময় শ্যামনগরে আকাশলীনা যেন ভোরে সূর্য উকি দেওয়ার মত। উপজেলা প্রশাসনের সম্পূর্ণ তত্বাবধানে সুন্দরবনের এক বারে কোল ঘেষে এবং চুনা নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে সুন্দরবন ভিত্তিক পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মাচনের লক্ষে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম গত ৪ এপ্রিল২০১৫ তারিখে প্রকল্পটি শুরু করেন। বর্তমানে প্রকল্পটি জেলা প্রশাসন, সাতক্ষীরার তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এ পর্যটন কেন্দ্রটি মন কেড়েছে অসংখ্য পর্যটকের। ছুটির দিনে পর্যটকদের ব্যপক আগমনে পরিপূর্ণ যৌবন ফিরে পায় আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। বলে রাখা দরকার আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজমের মধ্যেই দর্শনার্থীদের জন্য স্থাপিত হয়েছে আব্দুস সামাদ মৎস্য মিউজিয়াম। যেটি আকাশলীনার সৌন্দর্যের সাথে বাড়তি সোন্দর্য্য যুক্ত করেছে। মানব সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের কারণে দ্রত জলবায়ুর পরিবর্তন এবং মাছের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দিন দিন মাছ বিলুপ্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের ওই সব সংস্কৃতির নিদর্শন দেখতে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলে বাস করা বিভিন্ন জলজ প্রাণীর সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই ব্যতিক্রম ধরনের জাদুঘর গড়ে তুলেছে উপজেলা প্রশাসন। জাদুঘরটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের সুন্দরবন অঞ্চল অর্থাৎ উপকূলীয় অঞ্চলের মাছের সাথে পরিচয় ঘটাতে তৈরি করা হয়েছে। তবে মিউজিয়ামটিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মাছের সাথে সাথে যদি এ অঞ্চলের সকল প্রাণ বৈচিত্র্যকে যুক্ত করা হয় তাহলে পর্যটকদের কাছে মিউজিয়ামটি আরো প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া আকাশলীনা সংলগ্ন শুরু নির্মিত হচ্ছে জেলা প্রশাসক এগ্রো-ফিসারিজ টেকনোলজি পার্ক যেটাকে সাজানো হবে পানির রাজ্যে বসবাসকারি নানান প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম তৈরির মাধ্যমে। আকাশলীনার মাধ্যমে জাগবে মন বাঁচবে সুন্দরবন। একটি আকাশলীনা কিন্তু বাঁচবে হাজার প্রাণ ও প্রাণ বৈচিত্র্য। আর সেই হাজার প্রাণের সমষ্ঠিগত নাম সুন্দরবন। মানুষের অসৎ আচরণের কারণে ধ্বংসের মুখে পৃথিবীর একক সর্ব বৃহৎ ‘ম্যানগ্রোভ’ বা শ্বাসমূলীয় বন। যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের, মূখ ভাবতেই হিম ধরে শরীরে। তবু সুন্দরবন ভ্রমণের নেশাটা পিছু ছাড়ে না পর্যটকের। কেবল জোয়ার ভাটার বৈচিত্র্যই নয়। সুন্দরবনের এক এক এলাকার বৈশিষ্ট্যও ভিন্নতর। তাই বার বার ভ্রমণেও তৃপ্তি মেটে না। প্রতিবারই নতুন অভিজ্ঞতা, পরিচয় হয় নতুন বৃক্ষ, মাছ আর পাখিদের সঙ্গে। সুন্দরী গাছের আচলে আটকে যায় চোখ। নানান ধরণের গাছের অপরুপ সৌন্দর্য্য ভরপুর এ মায়া ভরা বন।কোথাও একক ভাবে আবার কোথাও মিশ্রভাবে গড়ে উঠেছে গেওয়া বন। গেওয়ার সৌন্দর্য আকৃস্ট করে পর্যটকদের, ভ্রমনের সময় নদীর পাড়ের গেওয়ার অপূর্ব সমরোহে নয়ন জড়িয়ে যায় পর্যটকদের। যা মূলত জ্বালানী ও বাড়ির বেড়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সবাই বলে থাকি সুন্দরবন মায়ের মতন, কিন্তু পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান যেমন তার পিতা মাতার সাথে অসৎ আচরণ করে থাকে ঠিক বনের সাথে এর ব্যতিক্রম নয়।বন নির্ভরশীলতা কমাতে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী এখানকার স্থানীয় গবেষকেরা। তাছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখ যোগ্য পরিমান আয় এ স্থানটি থেকে সম্বভ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা। সরকারের রাজস্ব আয় ও পর্যটনের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক মাকসুদ আলম জানান“ বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে পর্যটকদের আগমন অনেকাংশে বেড়েছে, ফলে সরকারের রাজস্বও দিন দিন বেড়েই চলেছে, আকাশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টার তৈরি হওয়ায় পর্যটকদের মাঝে নতুন পুত্তলি তৈরি হয়েছে সুতরাং পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। আকাশলীনা এবং সুন্দরবনে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে কতটুকু সম্ভাবনাময় জানতে চাইলে তিনি জানান,বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সুন্দরবন অধিক সম্ভাবনাময় স্থান এর সাথে আকাশলীনা যুক্ত হওয়ার কারনে আরো বেশি সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন আমরা সর্বাত্মক চেষ্ঠা করছি একদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার অন্যদিকে বন যেন কোন প্রকার হুমকির মুখে না পড়ে সে দিকে লক্ষ্য রাখার, কিন্তু আমাদের লোক বল কম থাকার কারনে আমাদের মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হয়। কেউ যেন বনের উপর ক্ষতি না করতে পারে সে জন্য আমরা রুট ঠিক করে বনে যাওয়ার অনুমতি দেই যাতে করে কেউ বনের উপর ক্ষতি সাধন করতে পারে। তিনি বলেন আকাশলীন কে আরো বেশি ঢেলে সাজানো দরকার এবং সাথে সাথে সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কটি ভালোভাবে সংস্কার প্রয়োজন। তাহলে বিদেশী পর্যটকদের আগমন আরো অনেকাংশে বেড়ে যাবে ফলে রাজস্ব বাড়বে ,সাথে সাথে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। ” স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি আকাশলীনা তথা সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমনের ফলে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বেড়েছে অগনিত মানুষের দৈনিক আয়। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আকাশলীনা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ, এটি হওয়ার কারণে এখানকার অনেক মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে সাথে সাথে আয় বেড়েছে অনেক ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষের। ইউএনও স্যার আমাদের এলাকার বেকাদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ায় সত্যিই আমরা কৃতজ্ঞ সাথে সাথে ধন্যবাদ জানাই উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে। আকাশলীনা ও সুন্দরবরন পর্যটন সম্পর্কে জানতে চাইলে আকাশলীনার প্রকল্প প্রণয়নকারী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম বলেন, “শ্যামনগরে প্রাায় ৪০টি প্রাচীন স্থাপত্য ও দর্শনীয় স্থান আছে। এ প্রকল্পটির ফলে পর্যটকরা এসকল স্থাপত্য ও দর্শনীয় স্থান একই সাথে স্বাচ্ছন্দে- সহজে ভ্রমণ করতে পারছে। সুন্দরবনভিত্তিক জীবিকা অর্জনকারীদের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানও তৈরী হয়েছে।আমরা চাচ্ছি স্থানীয় কমিউনিটিকে ব্যবহার করে রেসপনসিভ পর্যটন শিল্প সৃষ্টি করতে এবং উপজেলা পর্যায়ে পর্যটন কমিটি গঠন এবং পর্যটন এলাকা চিহ্নিত করতে সাথে সাথে ডেটাবেজ তৈরির মাধ্যমে ও দেশে বিদেশে আকাশলীনার প্রচার ঘটাতে। তাছাড়া কমিউনিটি নির্বাচন, সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ ও তাদের মাধ্যমে পর্যটন বিকাশের জন্য প্রস্তুতি চলছে। পর্যটকদের সাথে এলাকার বিভিন্ন সেবা প্রদানকারীদের লিঙ্কেজ তৈরি করছি। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সহ প্রশাসনের সকল স্থরের সকলেই সেবা প্রদানের জন্য সর্বদা প্রস্তুত। আমরা চেষ্ঠা করছি বিভিন্ন প্যাকেজ অফারের ব্যবস্থা করতে যার মাধ্যমে পর্যটকেরা স্বল্প খরচে ভ্রমণ করতে পারবে। উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য সম্পদকে পর্যটকদের মাঝে উপস্থাপনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে মোঃ আবদুস সামাদ ফিস মিউজিয়াম, আকাশলীনা থেকে বনের মধ্যে সরাসরি দেখতে নির্মিত হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার, এছাড়া নির্মিত হয়েছে ইকো রেস্ট রুম, ট্রেনিং সেন্টারসহ অন্যান্য অবকাঠামো। তিনি আশাবাদি, বন নির্ভরশীলতা কমাতে আকাশলীনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। সুন্দরবনকে নিয়ে যারা জীবিকা অর্জন করে আকাশলীনার মাধ্যমে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে সাথে সাথে বনের উপর হুমকি কমবে বাড়বে প্রাণ বৈচিত্র্য।” একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মতে একজন পর্যটক ভ্রমনের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে বাস, রিক্সা, হোটেল, মোটেল, চা , ফুচকা, এভাবে এগার জন ব্যক্তিকে স্পর্শ করে যার দ্বারা ঐ মানুষগুলির আয় বেড়ে যায়। পর্যটকরা  বছরের শীতকালীন সময়টা ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন সুন্দরবন দেখতে। সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্যের গভীরে ডুবে যান সুরঞ্জনারা। কিন্তু সে অভিজ্ঞতা নিতে বড় বাধা সময়, দূরত্ব, অর্থ এবং নিরাপত্তা বলয়। যে অঞ্চল যত বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ সে অঞ্চল তত বেশি উন্নত। তবে এখানে সন্ত্রাসী বাহিনী গুলো পর্যটকদের আক্রমণ করেছে, এ রকম কোনো ঘটনা নিকট অতীতে নেই।তবুও পর্যটকদের আগমন বাড়াতে অবশ্যই সুন্দরবন পর্যটনে পর্যাপ্ত বনরক্ষী প্রয়োজন ,ট্যুরিস্টরা যখন ট্যুরে যাই, তখন পর্যাপ্ত গার্ড থাকে না। গার্ড সংকট দেখা দেওয়ার কারণে পর্যটকরা সুন্দরবনের ভেতরে যেতে পারেন না। সুতরাং ফরেস্ট বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক গার্ড প্রয়োজন। নিরাপত্তা বলয় সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলী বলেন, “ভ্রমণ কারীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত, বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের জন্য আমরা অত্যন্ত আন্তরিক,সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তার দিতে আমরা সব সময় প্রস্তুত”। গহীন সুন্দরবন যেমন- হিরণ পয়েন্ট, নীল কমল সহ আরো কিছু স্থানে ভ্রমন করতে গেলে কিছু সমাস্যার মুখে পড়তে হয় পর্যটকদের। সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষকে সুন্দরবনে ঘোরার জন্য খুলনা থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হয়। এটা খুবই কষ্টকর। দুই-তিন দিন ঘুরে পর্যটক হিসেবে মানুষ অনুমতি পাই। অনুমতি পেলেও বলা হয়, গার্ড প্রস্তুত নেই। এ প্রসঙ্গে গত ২৪ শে ডিসেম্বর শ্যামনগর উপজেলার মুিন্সগঞ্জ টাইগার পয়েন্টে এক আলোচনা সভায় পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরুপ চৌধুরী বলেন, ‘অতি শিঘ্রই এই সমাস্যা সমাধান করা হবে এবং পর্যটকরা যাতে মুন্সিগঞ্জ থেকেই গহীন বন ভ্রমনের পাশ নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে,এবং সাথে সাথে গার্ড পেতে যাতে কোন সমাস্যা না হয় সে বিষয়ে দূত পদক্ষেপ গ্রহন করার আশ্বাস দেন তিনি। আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারটি আরো সুন্দর ও আকর্শনীয় করে তোলা অতি আবশ্যক বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকেরা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে সৌন্দর্যের লীলাভূমি আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। নতুন করে কৌশল ঠিক করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে আকাশলীনা। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। সুতরাং এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা দরকার আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজমের জন্য।আকাশলীনার সৌন্দর্য দেশে ও বিদেশে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের অধিকতর বিকাশ ঘটান সম্ভব বলে মনে করেন এলাকার চিন্তাশীল মানুষেরা। আকাশলীনার অপরুপ সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি আকাশলীনাকে আরো সৌন্দর্য্যময় করে তুলতে ট্যুরিষ্ট হিসাবে আসা আকাশলীনার পর্যটকদের চাওয়া থেকেই যাই। তাদের চাওয়া মতে, আকাশলীনার মনোগ্রাম এবং নাম সম্বলিত ব্রেসলেট তৈরি করা যেতে পারে যার মাধ্যমে আকাশলীনায় প্রবেশের পর দর্শনার্থীরা প্রয়োজনে পার্কের বাহিরে আসলে পুনরায় ঢুকতে কর্তৃপক্ষকে পর্যটককে চিনতে সুবিধা হবে অন্যদিকে পর্যটক তার ভ্রমনের নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষন করবে সাথে সাথে আকাশলীনার প্রচার ও প্রসার ঘটবে। তাছাড়া স্থানটিতে পারিবর্জ্য ফেলার জন্য ডাস্টবিনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। নালা কিংবা নদীতে ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। সুতরাং পরিবেশ ঠিক রাখতে অর্থাৎ স্থানটি যেন পরিবেশ বিমূখ না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সাথে সাথে আকাশলীনায় চলাচলের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক বোর্ড, সুন্দরবন সম্পর্কে জ্ঞান গর্ভিত বোর্ড, শ্যামনগরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে যাওয়ার রাস্তা পরিচিতি সহ শ্যামনগর এবং এর ইতিহাস সম্বলিত বিল বোর্ড স্থাপন অতি আবশ্যক। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন পর্যটকরা সচেতন থাকবে অন্যদিকে বাড়তি সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে এবং আকাশলীনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে পর্যটকদের কাছে।এখনি আকাশলীনাকে সুন্দর পরিপাটির মাধ্যমে গুছিয়ে ফেলা দরকার। এখানকার  নদ-নদী ও বন, ঐতিহাসিক স্থান সব মিলিয়ে পুরো উপজেলাটি পর্যটনের জন্য উপযুক্ত। তাই শুধু সুন্দরবন বা আকাশলীনা নয় বরং আকাশলীনাকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলাকে পর্যটনবান্ধব করার প্রয়াস নিতে হবে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে হলে সারা সুন্দরবন অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়াতে হবে হবে। আর এ অঞ্চলকে ঢেলে সাজাতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধার্থে সাতক্ষীরা মুন্সিগঞ্জ সড়কটি আরো প্রসস্থ ও সংস্কার করতে হবে।পর্যটকদের আগমন বাড়াতে আকাশলীনা থেকে পর্যটকদের জন্য সাশ্রয়ী রেটে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান ভ্রমনের জন্য ট্যুর প্যাকেজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।যাতে করে কোন স্থান থেকে পর্যটকেরা এসে অন্যান্য পর্যটটকদের সাথে মিলে স্বল্প খরচে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারে। এর মাধ্যমে পর্যটকদের খরচ কমবে আর খরচ কমলে আগমন বাড়বে তাছাড়া দেশের এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে ভিন দেশী মানুষের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে। আকাশলীনার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে আকাশলীনার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টিত সান্ধ্যকালীন আলোকিত লেক তৈরি বা বিনোদনের স্থান তৈরি করা যেতে পারে যেখানে থাকতে পারে চা,কফি, ফুচকা সহ গ্রামের মানুষের তৈরি বিভিন্ন পিঠাপুলি সহ বিভিন্ন ভিন্ন ধরনের ছোট খাট বিক্রেতা। যেন সারাদিন বিভিন্ন স্থান ভ্রমনের পরে সান্ধ্যকালীন সময়টাও সুন্দরবনের পাদদেশে বসে বনের অপরুপ সৌন্দর্যের গভীরে ডুবে যেতে পারেন সুরঞ্জনারা।পর্যটকদের নিশি যাপনের সুবিধার্থে এখানে বেশি বেশি কটেজ নির্মাণ করা যেতে পারে এবং যার ভাড়ামূল্য হবে মানুষের নাগালের মধ্যে এবং কটেজ গুলো হতে হবে প্রায় সুন্দরবন সংলগ্ন। বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম এবং ভাড়ার পরিমান অনেক বেশি সুতরাং অনেক সময় পর্যটকেরা রাত্র যাপনে কুন্ঠিত বোধ করেন।কটেজ হলে এবং ভাড়ার পরিমান কম হলে পর্যটকেরা এসে আরেকটি নতুন জায়গায় বেড়ানোর সুযোগ পাবেন। সুন্দরবন ঘোরার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন স্থান্নে ছিটিয়ে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই সুতরাং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।আর তাহলে আশলীনা ইকোট্যুরিজম সেন্টার হবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের এক অন্যতম দৃষ্টান্ত স্বরুপ।