দেশের খবর: মধ্যরাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে থেকে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ডিসি নয়, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল নিজ নিজ ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনমনে শনিবার থেকে যত প্রশ্ন উঠেছে সব প্রশ্নের সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে। এক-দুজন কর্মকর্তার দায় সরকার বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেবে না।’
বিভাগীয় কমিশনারের খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবেদন কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়ে যাবো। খসড়াতে যা দেখেছি সেটাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন হবে। যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর তাই আদেশে তার স্বাক্ষর লাগবে। ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি এখনই বলা ঠিক হবে না।’
আরিফের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যেহেতু প্রতিবেদনে সব উল্লেখ আছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি সেহেতু একসময় তিনি নির্দোষ প্রমাণ হবেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন ভ্রাম্যমাণ আদালতটা কতোটা জরুরি। কারণ তাৎক্ষণিকভাবে আমরা শাস্তি দিতে পারি।
রমজানে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, ভেজাল পণ্য বিক্রি করা হলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক উপযোগী হিসেবে কাজ করে। কিছুদিন আগে গুজবের কারণ লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে থেমেছে। কেউ কোনো অনাচার করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের যে বিতর্কটি সৃষ্টি হয়েছে অবশ্যই আমরা মাথায় রাখব।
গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলাপ্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি কারাগার থেকে জামিন পেয়েছেন।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এ ছাড়া সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়।
তবে এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে।
এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। আরিফুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সেখানকার সাংবাদিকরা মানববন্ধন করে।
ওই মানববন্ধনে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা সব মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করে মুক্তি না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন সাংবাদিকরা।
এছাড়া কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে একটি মহল তুলে নিয়ে যাওয়ায় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে উল্লেখ করে যৌথ বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।