আজকের সেরা

৬ বছরে কোটিপতি ঘরজামাই বাবার ছেলে সাংবাদিক পেটানো ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম

By Daily Satkhira

March 17, 2020

দেশের খবর: কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনকারী সেই আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিনের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরে। উপজেলার কাশিপুরে নানা বাড়িতে বড় হন তিনি। বাবা মৃত নিছার উদ্দিনের পৈত্রিক বাড়ি একই উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা গ্রামে হলেও অনেক আগ থেকেই তিনি কাশিপুর এলাকায় শ্বশুরালয়ে ঘর জামাই থাকতেন।

নাজিমের বাবা নিছার উদ্দিন অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিন বছর আগে। তার আগে তিনি অনেক কষ্ট করে এমনকি ভাটায় কাজ করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। বাবার পাশাপাশি তার মা মাজেদা বেগমও তার বাবার বাড়িতে স্বামী সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছেন।

সোমবার সরেজমিন কাশিপুর এলাকায় নাজিমের বাড়িতে গিয়ে এসব কথা জানা গেছে।

কাশিপুর এলাকাবাসী জানান, নাজিম কাশিপুরে নানা বাড়িতে থেকে মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। ছোট বেলা থেকে তিনি খুব বদ মেজাজি আর একরোখা ছিলেন। গ্রামে কারো সঙ্গে ভালোভাবে মিশতেন না। ২০০৪ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০০৬ সালে মণিরামপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করে এক্সিম ব্যাংকে চাকরি করেন কিছুদিন। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হয়ে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হন।

একভাই এক বোনের মধ্যে নাজিম বড়। এদিকে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় নাজিমের জড়িত থাকার বিষয়টি জানাজানি হলে মণিরামপুরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এলাকায় বিষয়টি এখন সবার মুখেমুখে। নাজিমের অর্থবিত্তের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে জোরেসোরে। সাংবাদিকদের মুখে নাজিমের ক্ষমতা অপব্যবহারের বিষয়টি শুনে বিরূপ মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী। এমনকি নাজিমের মা মাজেদা বেগমও তেমনই মন্তব্য করেছেন।

নাজিম উদ্দিন ২০১৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদানের তিন-চার মাস পর একই উপজেলার হোগলাডাঙা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে সাবিনা সুলতানাকে বিয়ে করেন। আব্দুর রাজ্জাক মণিরামপুর পৌরশহরের ভগবানপাড়ায় তার নিজের বাড়িতে থাকেন। আমেরিকান প্রবাসী এক ভায়রা ভাইয়ের সঙ্গে শ্বশুর বাড়ির পাশেই সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় কেনা আট শতক জমির উপরে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন নাজিম উদ্দিন।

এছাড়া কাশিপুরে নানার দেয়া পাঁচ শতক জমির উপর তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি একতলা বাড়ি রয়েছে তার। বাড়িটি চারটি সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। মাত্র ছয় বছরের চাকরিজীবনে কিভাবে তিনি এতো টাকার মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর মনে। তারা নাজিম উদ্দিনের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নাজিমের নির্মাণাধীন চারতলা বাড়ির ঠিকাদার আতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৮ সালে হোগলাডাঙা গ্রামের মোসলেম নামে এক লোকের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায় আট শতক জমি কেনেন নাজিম উদ্দিন ও তার এক বিদেশি ভায়রা ভাই। সেখানে এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যে তিন ইউনিটের চারতলা একটি বাড়ির কাজ চলছে। প্রতি তলা দুই হাজার ৯০০ বর্গফুটের। ১১ মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। বাড়ির শ্রমিক ঠিকাদার আমি। এই পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

নাজিম উদ্দিনের মা মাজেদা বেগম বলেন, বউমার কাছে শুনেছি, নাজিমের চাকরির স্থানে কি একটা সমস্যা হয়েছে। বিস্তারিত জানি না। পরে সাংবাদিকদের কাছে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের বিষয়টি শুনে তিনি বলেন, এটা নাজিম ঠিক করিনি। বাড়ি আসলে আমি তাকে বোঝাব।

নাজিমের স্ত্রী সাবিনা সুলতানা বলেন, গত রবিবার মণিরামপুর বাজারে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। নাজিমকে কল করে মোবাইল বন্ধ পাচ্ছিলাম। সোমবার সকালে নতুন একটা নম্বরে নাজিম কল করেছে। সে বলেছে, একটু ঝামেলা হয়েছে। কোনো সমস্যা না। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে।

নাজিম উদ্দিনের মণিরামপুর বাজারে বাড়ি করার বিষয়ে সাবিনা সুলতানা বলেন, বাড়ির জমিটা আমাদের দুই বোনকে আব্বা দিয়েছেন। সেখানে আমরা দুই বোন মিলে বাড়ি করছি। আমি একটা ব্যাংক লোন নেয়ার চেষ্টা করছি। এখন খরচ আমার সেই বোন দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন আরডিসি নাজিম উদ্দিনসহ অন্যরা। পরে তাকে মাদকের দায়ে এক বছরের সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এছাড়াও নাজিমের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে মারপিটসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিককে নির্যাতন করায় নাজিম উদ্দিনসহ জড়িত অন্যদের ওএসডি করা হয়েছে।