সাতক্ষীরা

কলকাতার সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু – – সুভাষ চৌধুরী

By daily satkhira

March 17, 2020

তিনি শুধু বাঙালিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করেননি। তিনি বাঙালির আর্থিক সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক মুক্তির জন্য তাদের প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার আপামর জনতা তাকে অভিষিক্ত করেন বঙ্গবন্ধু নামে। জন্মশতবর্ষে আজ নতুন করে ফিরে দেখা তার জীবন সংগ্রামকে। বঙ্গবন্ধুর প্রশস্তি গাইতে গিয়ে এভাবেই বর্ণনা শুরু করেছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক বর্তমান। কেবল বর্তমানই নয় , ভারতের অন্যান্য গণমাধ্যম বিশেষ করে আনন্দবাজার পত্রিকাও ভাষার অলংকারে বাঙালির মুক্তিসনদ বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছে পর্বত প্রমান এক বিশাল মহিরুহ হিসাবে। এই সেই শেখ মুজিব যাকে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের গণমঞ্চ থেকে বাংলার আপামর জনতা ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম দিয়ে অভিষিক্ত করেছিল। তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা ও বাঙালির। বাঙালি জাতি পেয়েছিল তার মতো একজন প্রকৃত বান্ধবকে। তাই তাকে বঙ্গবন্ধু শিরোপা দিতে কারও কোনো কুন্ঠা ছিল না। তখনকার পূর্ববঙ্গের ঐতিহাসিক ঘূর্ণাবর্ত ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাকে এভাবেই অবিসংবাদিত নেতা গড়ে তুলেছিল। পাকিস্তানি রাজনৈতিক দরবারের খাজা গজা, খান বাহাদুর উজির আজম নায়েব নাজিমের কবল থেকে শেখ মুজিব রাজনীতিকে নিয়ে এসেছিলেন সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের দোরগোড়ায়। প্রান্তিক মানুষের চাহিদাকে পরিণত করেছিলেন রাজনীতির কেন্দ্রিয় ইস্যুতে। তার সংগ্রাম , তার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবই হয়ে ওঠেন বাঙালির মুখপাত্র। তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির প্রতিনিধি। তিনি বারবার কারা নির্যাতনের শিকার হন। তবু তিনি জনগনের আন্দোলন থেকে নিজেকে এতোটুকু সরিয়ে রাখেননি। তিনি বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি চাই আমার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। তিনি পূর্ববাংলার মানুষের মুক্তিসনদ ছয়দফা তুলে ধরেছিলেন। পাকিস্তানি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ফের তাকে ২৫ মার্চ গ্রেফতার করে। একই সাথে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ভারি অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। ইয়াহিয়া খান বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী ঘোষনা করে। তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। বঙ্গবন্ধু এসব কিছুর তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। তিনি আগেই বলেছিলেন আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো । তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। ভারতীয় গনমাধ্যমগুলি এভাবেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসিত করেছে। ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’ অন্নদাশংকর রায়ের এই কবিতা তুলে ধরে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে ‘শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বাংলা ভাষা ও বাঙালির জীবনবোধের তিনি প্রতিভূ, নেতা, বন্ধু– বঙ্গবন্ধু’। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ আজকের বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া মানুষটি স্বপ্ন দেখেছিলেন এক স্বাধীন দেশের। যে দেশের শাসন কর্তা হবেন বাঙালি, যে দেশের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। দেশ ভাগের আগে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ বাঙালির স্বাধীনতার দুর্মর আকাংখা। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার সামনে তার ঘোষনা এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক সেই ভাষন মেমোরি অব দ্য ওয়ার্লড রেজিস্ট্রারের অংশ। ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রের বৈশ্বিক মুখ, বৈশ্বিক নেতা। আজ ১৭ মার্চ তার জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ সরকার এ বছরটিকে মুজিববর্ষ ঘোষনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে ধ্বনিত জয়বাংলা সম্প্রতি পেয়েছে জাতীয় স্লোগানের মর্যাদা। ২০০২ সালে বিবিসির এক জরিপে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ নতুন করে স্মরণে এসেছেন তিনি। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। কারণ যারা বাংলার স্বাধীনতাকে মানেনি, যারা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বজোড়া খ্যাতিতে ঈর্ষাণি¦ত ছিল তারাই তাকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের বিচার করে কলংক মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন । কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু, তিনি চিরন্তন। তিনি বাঙালির নেতা, তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি বাঙালি জাতির জনক। তিনি অক্ষয় তিনি অব্যয়। তার কোনো ক্ষয় নেই। ——– সুভাষ চৌধুরী , সাংবাদিক, দৈনিক যুগান্তর ও এনটিভি।