জাতীয়

নিউমোনিয়াইও বিড়ম্বনার শিকার রোগীর; মিলেছ না হাসপাতালে ভর্তি

By daily satkhira

March 18, 2020

ন্যাশনাল ডেস্ক: নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বাবাকে ভর্তি করাতে গত সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান নুরুন নাহার নওশীন। কিন্তু প্রত্যেক হাসপাতালই ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেয় তাদের। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া রোগীকে ভর্তি করা হবে না বলেও জানিয়ে দেয় হাসপাতালগুলো।

ভুক্তভোগী এ পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল টেস্ট রিপোর্ট চাওয়ায় আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তারা। তাত্ক্ষণিক কোনো রেসপন্স পাওয়া না গেলেও পরে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে আসেনি এমন কারো টেস্ট করার প্রয়োজন নেই। অনেক অনুরোধের পর আইইডিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই গতকাল সকালে মারা যান এ রোগী।

শুধু এ রোগী নন, সর্দি-জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে গেলেই এখন ভর্তি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে রোগীরা। যেসব রোগীকে এতদিন কোনো সংকোচ ছাড়াই চিকিৎসা দেয়া হতো, ভয়-আতঙ্কে সেসব সাধারণ রোগীও চিকিৎসা পাচ্ছে না এখন। দেশে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সাধারণ সর্দি-জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা প্রশ্নের।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের সামনে দেখা যায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করাতেই সকাল থেকে জ্বর-সর্দি নিয়ে সেখানে ভিড় জমায় তারা। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে এসেছে তারা। যদিও আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে তাদের সরাসরি না এসে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে হটলাইনে কল করে পরামর্শ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ছোট ভাইকে নিয়ে আইইডিসিআরের সামনে নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সর্দি-জ্বর নিয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছি কিনা সেটা পরীক্ষা করাতে বলল। এখানে আসার পর কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বসাধারণের জন্য এখানে সরাসরি কোনো ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। কোনো সমস্যা দেখা দিলে হটলাইনে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। আমি বিদেশ থেকেও আসিনি এবং আমার বাসায়ও কোনো বিদেশী আসেনি। কিন্তু জ্বর-সর্দি আর কাশিতে ভুগছি বলে চিকিৎসার জন্য এখন এভাবে ঘুরতে হচ্ছে!

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও হাসপাতাল আছে ২ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে টারশিয়ারি লেভেলে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ২৫৪টি। বেসরকারিভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় পরিচালিত হাসপাতালের নিবন্ধন আছে ৫ হাজার ৫৪টির। বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৯। সব মিলিয়ে বেসরকারিভাবে এ ১৪ হাজার ৫৮৩টি প্রতিষ্ঠানে সিট আছে ৯০ হাজার ৫৮৭টি। দেশের চিকিৎসাসেবার প্রায় ৮৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের হলেও একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনো অনুমতি দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ কারণে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীসহ সারা দেশে সামান্য সর্দি-জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে আগে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

রাজধানীর সিটি হাসপাতালের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে কিনা সেটা নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। অন্য সময়ে এলে যেটাকে আমরা নিউমোনিয়া বা সর্দি-জ্বর ভাবতাম, সেটা এখন ভাবা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য সন্দেহজনক রোগীকে আইইডিসিআরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ সর্দি-জ্বর নিয়ে গেলে চিকিৎসা নিতে বিড়ম্বনার বিষয়টি এখনো নজরে আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানি। কোনো অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান এ কর্মকর্তা।