দেশের খবর: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান এবং সব ধরনের সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখতে মাঠ প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাঠ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নেওয়া পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে অবহিত করার পাশাপাশি তিনটি সমস্যার কথা তুলে ধরেন ডিসি ও কমিশনাররা। এগুলো হচ্ছে—বিদেশফেরতদের চিহ্নিত করা, চিহ্নিত করার পর তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকা। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির সব ধরনের সহযোগিতা মাঠ প্রশাসনে পৌঁছানো হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়।
গতকাল সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা, আট বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি এবং ৬৪টি জেলার ডিসি এবং এসপিরা যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ১৫ জনের মতো সচিব, পুলিশের আইজিসহ অন্য শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিত মোকাবেলায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক সমাবেশ বন্ধ রাখার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় মাঠ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ এসংক্রান্ত লিখিত নির্দেশনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল।
একপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে তাঁদের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান মন্ত্রিপরিষদসচিব। তখন মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ সাত-আটটি জেলার ডিসি এবং ঢাকা, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনাররা মাঠ প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সব ডিসি ও কমিশনারই সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন করা হচ্ছে বলে জানান। সঙ্গে তিনটি বিষয়ে তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, গাজীপুরের ডিসি বলেন, যাঁরা বিদেশ থেকে আসছেন তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আবার অনেকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে চাচ্ছেন না। মাদারীপুরের ডিসি বলেন, বিদেশফেরতদের যেসব তালিকা কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেই তালিকার অনেকে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে না এসে শহরে থাকছেন। তাই যত তথ্য আসছে সেই অনুযায়ী তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
নরসিংদীর ডিসি বলেন, এখানে শিল্প এলাকা হওয়ায় বিদেশফেরতদের চিহ্নিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে যতটুকু খবর পাচ্ছেন সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কলকারখানা ও অফিসের কর্মঘণ্টার বিষয়টিও তিনি তোলেন বলে জানা গেছে। এ সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। বলা হয়, এখনই কারাখানা ও অফিস বন্ধের সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না সরকার। বৈঠক শেষে তথ্যসচিব কামরুন নাহার কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা দেশের মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এটা যেন না হয় সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, অনেক নির্দেশনা আগেই লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের সবাইকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সব পর্যায়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। আমরা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে যুক্ত আছি এই বার্তাটা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।